ফের শুরু হচ্ছে ঢাকা-গৌহাটি ফ্লাইট ও বাস চলাচল

নিজস্ব প্রতিবেদক

উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম আকর্ষণীয় রাজ্য আসাম। এখানে ভূপেন হাজারিকার সমাধিক্ষেত্র থেকে শুরু করে আছে কামরূপের কামাখ্যা মন্দিরের মতো স্থাপনাও। রাজ্যটিতে ভ্রমণে বাংলাদেশের পর্যটকদের আগ্রহ থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ না হওয়ায় অনেকেই আসতে পারেন না। বিষয়টিকে মাথায় রেখে শিগগির ঢাকা থেকে গৌহাটি রুটে ফ্লাইট চলাচল ফের শুরু করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চালু হচ্ছে গৌহাটি-শিলং-ডাউকি-সিলেট-ঢাকা রুটে বাস চলাচলও।

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যায় আসামের গৌহাটিতে রাজ্যের অতিথি ভবন ‘কইনাধারা’য় সফররত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্বশর্মা।

তিনি বলেন, ঢাকা-গৌহাটি রুটে আগামী তিন মাসের মধ্যে আমরা নিয়মিত ফ্লাইট চালু করবো। করোনা মহামারির আগে গৌহাটি-শিলং-সিলেট হয়ে ঢাকা পর্যন্ত আমাদের বাস চলতো। করোনার কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবার এটি চালুর জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেয়েছি। আশা করছি এই রুটে বাস সার্ভিসও দ্রুত চালু হয়ে যাবে।

হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের অনেক সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশের নৌপথের কল্যাণে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পণ্য (আসামে) আমদানির চুক্তিও আছে। আমরা উভয়পক্ষের জন্য লাভজনক এমন অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে আরও জোর দিচ্ছি।

এর আগে, মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আসামসহ ভারতের মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে, কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, এমনকি প্রাণও দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে। ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক এমনই রক্তের অক্ষরে লেখা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিচক্ষণ নেতৃত্বে এই সম্পর্ক আরও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রতিনিধিদলের এই সফরের বিষয়ে ব্রিফ করেন আসাম সরকারের অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের সেক্রেটারি মানবেন্দ্র প্রতাপ সিং। এরপর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়।

তারপর স্বাগত বক্তব্য দেন আসাম সরকারের মুখ্য সচিব যীষ্ণু বড়ুয়া। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটওয়ারী।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবীন চৌধুরী (বীর বিক্রম)। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আসামের মানুষসহ ভারতের জনগণের ভূমিকা ও ত্যাগের কথা উল্লেখ করেন। শমসের মবীন চৌধুরী বলেন, যে সম্পর্ক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে তৈরি হয়েছে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দিনে দিনে আরও সমৃদ্ধি লাভ করছে এবং করবে।

মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণে সুযোগ দিতে এমন সফরের আয়োজন করায় আসামের মুখ্যমন্ত্রী, ঢাকায় ভারতের হাইকমিশন এবং গৌহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান শমসের মবীন চৌধুরী।

এ সময় সুবিধাজনক সময়ে হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান তিনি। এজন্য তার হাতে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্রও তুলে দেন শমসের মবীন চৌধুরী। জবাবে হিমন্ত বিশ্বশর্মাও তার বাংলাদেশ সফরে আগ্রহের কথা জানান।

অনুষ্ঠান শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রতিনিধিদলের সবাইকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা জানান মুখ্যমন্ত্রী। এ সময় শমসের মবীন চৌধুরীও প্রতিনিধিদলের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা স্মারক উপহার দেন।

শেয়ার করুন