ইরাকে তুরস্কের হামলা, নিহত ৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইরাকের উত্তরের দোহুক প্রদেশে তুরস্কের হামলায় আট জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এই হামলায় আহত হয়েছেন ২৩ জন।

ইরাকের জাতীয় গণমাধ্যম বুধবার (২০ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। খবর রয়টার্সের।

universel cardiac hospital

ইরাকের কুর্দিস্থান ও তুরস্কের সীমানার কাছাকাছি জাখো নামের এলাকায় একটি রিসোর্টে ভয়াবহ এই বোমা হামলা চালানো হয়। এসময় যারা মারা যান তাদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক।

অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে মেয়র মুশির মোহাম্মদ জানান, এসময় অন্তত চারটি মিসাইল ছোঁড়া হয়। জাখো শহরের বারাখা এলাকার ওই রিসোর্টে। এটি আধা স্বায়ত্বশাসিত কুর্দিশ শাসিত একটি অঞ্চল। মৃতরা সবাই ইরাকি নাগরিক ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল কাদিমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেইনের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন। তিনি এই ঘটনার তদন্তে একটি দলকেও নিয়োগ করেছেন।

কুর্দিশ প্রদেশে দক্ষিণের শহরগুলো থেকে অনেক পর্যটক অতিরিক্ত গরম সইতে না পেরে আসেন। এই এলাকাটি তুলনামূলক শীতল। এই পর্যটনস্থলগুলো তুরস্কের সামরিক ঘাঁটির কাছাকাছি অবস্থিত।

তুরস্ক নিয়মিত ইরাকের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ও সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে থাকে এবং এর আগে তারা কমান্ডো পাঠিয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন মিশন পরিচালনা করেছে। কুর্দিশ পিকেকে ও সিরিয়ান কুর্দিশ ওয়াইপিজি মিলিশিয়ার বিরুদ্ধে তারা এই আক্রমণ চালিয়ে থাকে বলে দাবি। আঙ্কারার কাছে এরা উভয়ই সন্ত্রাসী সংগঠন। পিকেকে তুরস্ক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ১৯৮৪ সালে, এরপরই তারা অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। এর আগে এই দ্বন্দ্বে প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছে।

এর আগে স্থানীয় সময় সোমবার (১৮ এপ্রিল) ইরাকের উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক আন্তঃসীমান্ত সামরিক অভিযান শুরু করে তুরস্ক। আঙ্কারার দাবি, কুর্দি সশস্ত্রগোষ্ঠী পিকেকে-এর বিভিন্ন স্থাপনা ও সদস্যদের গোপন আস্তানা লক্ষ্য করে এ অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানে ব্যবহার করা হচ্ছে তুরস্কের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার ও ড্রোন। পাশাপাশি স্থল অভিযানে অংশ নিচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। তবে যুদ্ধবিমান ও সেনাসদস্যের সংখ্যা কত সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি।

তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার এক বিবৃতিতে জানান, অভিযানের প্রথম ধাপ সফলভাবে শেষ হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামলা চালানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এরইমধ্যে পিকেকে-এর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা, সুড়ঙ্গ ও অস্ত্রাগার ধ্বংসের দাবিও করেন তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

অভিযানে এখন পর্যন্ত কোনো সাধারণ মানুষ হতাহত হয়নি বলে দাবি করেন হুলুসি আকার। তিনি বলেন, কেবল পিকেকে-এর সদস্যদের লক্ষ্য করেই অভিযান চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি ইরাকের ঐতিহাসিক কোনো স্থাপনার যেন ক্ষতি না হয় সে বিষয়েও সতর্ক রয়েছে তুর্কি সেনারা। সশস্ত্রগোষ্ঠীটিকে পুরোপুরি ধ্বংস না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে বলেও জানান তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

তুরস্ক, ইরাক, সিরিয়া ও ইরানের কিছু অংশ নিয়ে স্বাধীন কুর্দিস্তান গঠনের লক্ষ্যে ১৯৮৪ সাল থেকে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে আসছে কুর্দিবিদ্রোহীরা। তুরস্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকাতেও গোষ্ঠীটির নাম রয়েছে। তাদের দমনে অভিযান অব্যাহত রেখেছে তুর্কি সেনাবাহিনী।

শেয়ার করুন