আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির (হেনোলাক্স) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনকে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। হেনোলাক্স দম্পতির বিরুদ্ধে শুধু অর্থ আত্মসাৎই নয়, তাদের বিরুদ্ধে গাজী আনিসকে ব্ল্যাক মেইল করারও অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। তবে ব্ল্যাক মেইল করার বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করেননি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বলেন, তদন্ত এখনো অব্যাহত রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
গত ৪ জুলাই বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরের খোলা স্থানে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গাজী আনিস নিজের গায়ে আগুন দেন। পরদিন মঙ্গলবার ভোরে তার মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় গাজী আনিসের বড় ভাই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। হেনোলাক্স কোম্পানির কাছে তিনি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পাওনা আছেন বলে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। মামলায় তা উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় ৫ জুলাই উত্তরায় এক আত্মীয়র বাসা থেকে আমিন দম্পতিকে গ্রেফতার করে র্যাব।
পরদিন ৬ জুলাই তাদের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি পুলিশের কাছে নুরুল আমিন বলেন, নরসিংদীর শিবপুরে জয়নগর গ্রামে তার বাড়ি। ব্যাবসায়িক জীবন শুরু করার আগে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন। ১৯৮৪ সালে হেনোলাক্স কোম্পানি শুরু করার পর তার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে।
কীভাবে গাজী আনিসের সঙ্গে নুরুল আমিনের পরিচয় হলো—এমন প্রশ্নের উত্তরে জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তাদের বলেন, মূলত তার স্ত্রী ফাতেমা আমিন সাহিত্য চর্চা করেন। তার কবিতার একাধিক বইও প্রকাশ হয়েছে। গাজী আনিসও সাহিত্য চর্চা করতেন। পুরানা পল্টনে স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টারের পাশে জুপিটার পাবলিকেশন্স থেকে কবিতার বই বের করতেন গাজী আনিস। এই সূত্র ধরে প্রথমে ফাতেমার সঙ্গে আনিসের পরিচয়। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় এলে আনিস হেনোলাক্স কার্যালয়ে এসে তাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। আড্ডার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে তিনি আনিসকে তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে বলেন। এর সূত্র ধরে তিনি চুক্তিনামা ছাড়াই ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন তাদের কোম্পানিতে। বিনিয়োগ বাবদ লভ্যাংশ হিসাবে বিভিন্ন সময়ে তাকে ৭৪ লাখ টাকা দেন। কিন্তু আনিস এক পর্যায়ে লভ্যাংশসহ পাওনা ৩ কোটি টাকা দাবি করেন। এ নিয়েই তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, হেনোলাক্সের মালিক ধূর্ত প্রকৃতির ব্যবসায়ী। তিনি আনিসকে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে তার সঙ্গে বিশ্বস্ততার সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ভারত ও থাইল্যান্ডে ঘুরতে যাওয়ার সময় নুরুল আমিন তার স্ত্রীকে দিয়ে আনিসের বেশ কিছু ‘বিব্রতকর মুহূর্ত’ ভিডিও করে রাখেন। পাওনা টাকা চাইতে গেলেই নুরুল আমিন ঐসব ভিডিও ফুটেজ তার সন্তানদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন। এই কারণে আনিস মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এই হতাশা থেকে আনিস আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
কুষ্টিয়ায়ও প্রতারিত হয়েছেন
কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডে তোফাজ্জুল হেলথ সেন্টারে গাজী আনিসের বিনিয়োগ রয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। ক্লিনিকটির মালিক ডা. আমিনুল হক রতন যিনি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। বিনিয়োগের লভ্যাংশ বাবদ প্রতি মাসে আনিস ক্লিনিক থেকে ৩৫ হাজার টাকা পেতেন। এক পর্যায়ে ক্লিনিকের মালিকের সঙ্গে লভ্যাংশ নিয়ে তার দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এর জের ধরে তিনি বিনিয়োগ ফেরত চান। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রশাসক হাজী রবিউল ইসলাম দুই জনকে নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে কোনো সমাধান হয়নি। পরে গাজী আনিস যশোর অর্থ ঋণ আদালতে ডা. আমিনুল ইসলাম রতনের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেন।