মিয়ানমারে চারজন গণতন্ত্রপন্থি কর্মীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ চালাতে সহায়তা করার অভিযোগে ওই চার গণতন্ত্র কর্মীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে দেশটির সামরিক কর্তৃপক্ষ। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সোমবার (২৫ জুলাই) এই তথ্য সামনে আনে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে গত কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটল। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের শুরুর দিকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিলিশিয়াদের সাহায্য করার অভিযোগে ওই চারজনকে গত জানুয়ারি মাসে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তাদের বিচার কার্যক্রম ছিল রুদ্ধদ্বার এবং সেখানে কারও সংশ্লিষ্ট হওয়ার সুযোগ ছিল না।
অবশ্য গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে এই মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিন্দার ঝড় ওঠে। এমনকি জাতিসংঘের দুই বিশেষজ্ঞ এই ঘটনাকে জনগণের মধ্যে ‘ভয় সৃষ্টির একটি জঘন্য প্রচেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার সংবাদপত্র জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে গণতন্ত্রপন্থি ব্যক্তিত্ব কিয়াও মিন ইউ রয়েছে। তিনি মূলত জিমি নামে বেশি পরিচিত। এছাড়া সাবেক আইনপ্রণেতা ও হিপ-হপ শিল্পী ফিও জেয়া থাও-ও রয়েছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার পর ৫৩ বছর বয়সী কিয়াও মিন ইউ এবং মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেতা অং সান সু চির ৪১ বছর বয়সী মিত্র ফিও জেয়া থাও রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলে গত জুন মাসে পরাজিত হন।
এছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য দুই ব্যক্তি হলেন হ্লা মিও অং এবং অং থুরা জাও। মামলার বিশদ কোনো বিবরণ ছাড়াই সংবাদপত্রটি বলেছে, এই চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও দণ্ডবিধির অধীনে অভিযোগ আনা হয় এবং কারাগারের প্রক্রিয়ার অধীনেই তাদের শাস্তি কার্যকর করা হয়।
অবশ্য মিয়ানমারে এর আগেও ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) জানিয়েছে, ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে মিয়ানমারে শেষবার বিচারিক মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে গণতন্ত্রপন্থি চারজন কর্মীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিষয়ে জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া দেয়নি মিয়ানমারের সামরিক মুখপাত্র।
ফিও জেয়া থাওয়ের স্ত্রী থাজিন ন্যুন্ট অং বলেছেন, তাকে তার স্বামীর মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে জানানো হয়নি। এছাড়া মন্তব্যের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে অন্য আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।
গত বছরের অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। সেনাবাহিনী শহরগুলোতে বেশিরভাগ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে দমন করার পর দেশজুড়ে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।
এএপিপি বলছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ২ হাজার ১০০-র বেশি লোক নিহত হয়েছেন। অবশ্য দেশটির জান্তার দাবি, প্রাণহানির এই সংখ্যা অতিরঞ্জিত।