অমর রায় নামের ঠাকুরগাঁওয়ে রাজবংশী সম্প্রদায়ের এক ছাত্রের একটি উক্তি উদ্ধৃত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের “বিয়ের দিনের পাগড়ি”। পাগড়িটা এক দিনই পরা হয়।’
সম্প্রতি নড়াইলের সাহাপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাটের বিষয়ে বিএনপির প্রতিনিধিদলের তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম একথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
ঠাকুরগাঁও এলাকায় রাজবংশী সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমার নিজের নির্বাচনী এলাকায় রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ প্রচুর, এক লাখ সাত হাজার ভোটারই আছেন রাজবংশী লোকেরা। তাদের মধ্যে একজন আমার ছাত্রই ছিলেন। নাম ছিল অমর রায়। সে খুব চমৎকার একটা কথা বলত বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে—আমাদের দেশি ভাষায় ‘হামরা হচ্ছি বিহার দিনের পগরি। মানে, বিয়ের দিনের পাগড়ি হচ্ছি আমরা। একটা দিনই পাগড়িটা পরা হয়, আর কখনো পরা হয় না। নির্বাচনের দিনই ওই পাগড়িটা পরতে হয়, ভোট দেওয়ার সময় নৌকাকে ভোট দিতে হয়। আর বাকিটা সময় আমাদের খোঁজ থাকে না।
সাংবাদিকদের নিরপেক্ষভাবে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন, বাড়িঘর, সম্পত্তি দখলের পরিসংখ্যানগুলো দেখার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে আসে, তখনই নড়াইলের মতো এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনা বাড়ে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের জমিজমা, বাড়িঘর দখল করে। এমনকি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের সময়টাতেও তাদের ওপর বেশি অত্যাচার হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে, তাদের জমিজমা দখল করে নিয়েছে।
বান্দরবানের রামু, নাসিরনগর, কুমিল্লা, দিনাজপুর, ঝিনাইদহ, পাবনা, যশোর, অভয়নগর, নাটোর ও নিজের এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন এবং তাদের বাড়িঘর, উপাসনালয়ে হামলার কথা উল্লেখ করেন।
এ সময় বিএনপির মহাসচিব সদ্য প্রকাশিত জনশুমারিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আজকে পত্রিকায় এসেছে, এবারের জনশুমারিতে দেখা গেছে, গতবারের (২০১১ সাল) চেয়েও হিন্দু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা কমে গেছে। শতকরা প্রায় এক ভাগের বেশি। হিসাবে দেখা গেছে, প্রায় ৭৫ লাখ।
সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনাগুলো জনদৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখন গোটা দেশের মানুষ একটাই কথা বলছে যে এ দেশের কোনো নির্বাচন হতে পারে না আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে। এবং নির্বাচন কমিশন নিজে এখন বলতে বাধ্য হচ্ছে যে রাজনৈতিক একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে, সব দলের অংশগ্রহণ না হলে, সে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। ঠিক এই সময়ে এই দাবিকে পাশ কাটিয়ে দেওয়ার জন্য এটাও একটা কৌশল।
নড়াইলের দিঘলীয়ার সাহাপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-দোকানপাট-মন্দির ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিংকেই দায়ী করেছে বিএনপি। দলীয় তদন্ত দলের আহ্বায়ক আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী এই অভিযোগ করেন।
নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, তদন্ত দল সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে আক্রান্ত পরিবার এবং স্থানীয় জনসাধারণের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে ঘটনাটি নিশ্চিতভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিংয়ের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই সংখ্যালঘুদের একটি সহজ উপাদান হিসেবে করা হয়। যেটা অন্যান্য জায়গার মতো নড়াইলেও ঘটেছে।
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নড়াইলের এই ঘটনার সঙ্গে সরকারই দায়ী। প্রতিবেদনে তা পরিষ্কার করে বলা হয়েছে।’ নড়াইলের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বিএনপির মহাসচিব।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে কটূক্তি করে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ১৫ জুলাই সকালে নড়াইলের দিঘলীয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২৩ জুলাই তদন্ত দল নড়াইলের দিঘলীয়া সাহাপাড়া গ্রামে গিয়ে সরেজমিন তদন্ত করে। সংবাদ সম্মেলনে নড়াইলের ঘটনার তদন্ত টিমের সদস্য অনিন্দ্য ইসলাম, জয়ন্ত কুমার কণ্ডু, ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা, অমলেন্দু দাস ও নিপুণ রায় চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।