তাইওয়ান ও বাণিজ্য ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বৈঠকে বসতে সম্মত হয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) টানা দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ফোনালাপে উভয় নেতা এই ইস্যুতে সম্মত হন।
এদিন তাইওয়ান ইস্যুতে একে অপরকে সতর্ক করে পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেন জিনপিং ও বাইডেন। শুক্রবার (২৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বৈশ্বিক পরাশক্তি এই দুই দেশের নেতা বৃহস্পতিবার পঞ্চমবারের মতো ফোনে বা ভিডিওকলে কথা বলেন। যদিও প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন এখনও শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।
এএফপি বলছে, বৃহস্পতিবার টানা দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ফোনে কথা বলার একপর্যায়ে মুখোমুখি বৈঠকে বসতে সম্মত হন শি জিনপিং এবং জো বাইডেন। তবে প্রথমবারের মতো তাদের মুখোমুখি সেই বৈঠকের সময় বা অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
ফরাসি এই বার্তাসংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, জো বাইডেন এবং শি জিনপিং ‘মুখোমুখি বৈঠকের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং এ বিষয়ে উভয়পক্ষের কাছে সুবিধাজনক একটি সময় খুঁজে বের করার বিষয়ে নিজ নিজ টিমকে নির্দেশ দিতে সম্মত হয়েছেন।’
বৃহস্পতিবার এই দুই নেতা ২ ঘণ্টা ১৭ মিনিট ধরে একে অপরের সঙ্গে কথা বলেন। বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে দীর্ঘ সময়ের এই কথপোকথনকে উভয় পক্ষই অনেক বিরোধের বিষয়ে একটি শক্তিশালী মতবিনিময় বলে উল্লেখ করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, জো বাইডেন যখন মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন ২০১৫ সালে তিনি চীনা প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্রে সফরের সময় শি জিনপিংকে আতিথেয়তা দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২১ সালের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জো বাইডেন এখনও জিনপিংয়ের সাথে দেখা করেননি।
চীনের রাষ্ট্র-চালিত বার্তাসংস্থা সিনহুয়া বলেছে, তাইওয়ান ইস্যুতে মার্কিন নীতির বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে কঠোর কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট জিনপিং। এছাড়া জো বাইডেনকে এক-চীন নীতি মেনে চলতেও বলেছেন তিনি। একইসঙ্গে বাইডেনকে সতর্ক করে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, (তাইওয়ানে) যারাই আগুন নিয়ে খেলবে তারা পুড়ে যাবে’।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট জিনপিং (জো বাইডেনকে) বলেছেন, যারা আগুন নিয়ে খেলবে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। এখন এটা আশা করা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ে এবার পরিষ্কার ধারণা পাবে।’
অপরদিকে বৃহস্পতিবারের এই ফোন কলে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, তাইওয়ান দ্বীপের মর্যাদা পরিবর্তনের জন্য যেকোনো ধরনের একতরফা পদক্ষেপের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে তাইওয়ানের বিষয়ে মার্কিন নীতি পরিবর্তন হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ফোন কলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে শি জিনপিং আরও বলেন, ‘তাইওয়ান ইস্যুতে চীনা সরকার এবং জনগণের অবস্থান একই। জিনপিংয়ের দাবি, ‘চীনের জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা দৃঢ়ভাবে রক্ষা করাই ১৪০ কোটি চীনা জনগণের ইচ্ছা।’
পরে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, প্রেসিডেন্ট বাইডেন জোর দিয়ে বলেছেন, তাইওয়ানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন হয়নি এবং দ্বীপটির স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করার বা তাইওয়ান প্রণালী জুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার একতরফা যেকোনো ধরনের প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করে ওয়াশিংটন।’
উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।
গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।
অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে।
তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যাকার চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে চীন। এমনকি গত বছরের মতো চলতি বছরের শুরু থেকেই তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এডিআইজেড) লঙ্ঘন করে আসছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।