পারলারের আড়ালে ঢাকায় রূপান্তরকামীদের অস্ত্রোপচার, প্লাস্টিক সার্জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিউটি পারলারে নারীদের রূপচর্চা সেবার আড়ালে রূপান্তরকামী পুরুষদের অস্ত্রোপচার করে আসছিল একটি চক্র। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে শতাধিক রূপান্তরকামী পুরুষের অস্ত্রোপচার করেছে তারা। চক্রের মূল হোতা হাদিউজ্জামান। এক সময় খুলনার এক চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। রাজধানীর মালিবাগে মাহি হাসান টাওয়ারের চতুর্থ তলায় স্ত্রীর নামে ‘লেজার বিউটি পারলার’ খুলে শুরু করেন লিঙ্গ রূপান্তরের কারবার। নিজেই সার্জন বনে যান।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, সমাজের একটি অংশ সাধারণত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির বাইরে থাকে। ফলে অপরাধী চক্র এরই রূপান্তরকামীদের ব্যবহার করে মাদক কারবারসহ নানা ধরনের অপকর্ম করায়।

গতকাল শুক্রবার রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতা হাদিউজ্জামান রহমান, তার স্ত্রী সোনিয়া আক্তারসহ দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এইচএম আজিমুল হক।

গ্রেপ্তাররা হলেন—প্রধান সার্জন পরিচয় দেওয়া হাদিউজ্জামান, তার স্ত্রী ও পারলার মালিক সোনিয়া আক্তার এবং এ দম্পতির সহযোগী নুর ইসলাম ও জনি আহম্মদ। এ সময় পারলারের বিশেষ একটি কক্ষে অভিযান চালিয়ে অপারেশনের বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং হরমোন পরিবর্তনের ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে।

উপ-পুলিশ কমিশনার এইচএম আজিমুল হক জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখে রূপান্তরকামী পুরুষদের টার্গেট করে ঘনিষ্ঠতা বাড়াত হিজড়াদের ‘গুরুমা’ কেন্দ্রিক চক্রের সদস্যরা। এরপর ওই পুরুষদের নিজেদের ডেরায় নিয়ে আদর আপ্যায়নের মাধ্যমে আস্থা অর্জন করে দলে রেখে দেওয়া হতো।

এরপর তাদের শরীরে বিশেষ হরমোন প্রবেশ করানো শুরু হতো। একপর্যায়ে পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরের প্রলোভন দেখানো হতো। বিভিন্ন কৌশলে এই রূপান্তরকামী পুরুষদের হাদিউজ্জামানের পারলারে এনে অপারেশন করে কেটে ফেলা হতো পুরুষাঙ্গ। স্তন বৃদ্ধির জন্য শরীরে স্ত্রী হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হতো। রূপান্তরের কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের ওষুধ বিদেশ থেকে আনা হতো।

হাদিউজ্জামান তার পারলারে রূপান্তরকামী পুরুষদের অস্ত্রোপচারের পর কৃত্রিম স্তন প্রতিস্থাপনের কাজও করতেন। এ ছাড়া গায়ের রং ফরসা করা ও ঠোঁটের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সার্জারি করতেন তিনি।

হাদিউজ্জামানের পরিচয় সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তা আজিমুল হক বলেন, একসময় খুলনায় এক সার্জনের সহকারী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কৌশল রপ্ত করে ফেলেন হাদিউজ্জামান। পরে ঢাকায় এসে নিজেই বনে যান সার্জন। খুলে বসেন ‘লেজার বিউটি পারলার’ নামে একটি পারলার। সেখানে রূপান্তরকারী পুরুষদের অস্ত্রোপচার ও লিঙ্গ পরিবর্তনের কাজ করা হতো।

প্রতিটি সার্জারির আগে হাদিউজ্জামান ১ লাখ করে টাকা নিতেন। চিকিৎসক হিসেবে তাঁর কোনো সনদ নেই। নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে শতাধিক পুরুষের অস্ত্রোপচার ও হরমোন চিকিৎসা করেছেন।

হিজড়াদের গুরু মায়েরা এই চক্রের মাঠপর্যায়ে কাজ করেন উল্লেখ করে আজিমুল হক বলেন, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত তৃতীয় লিঙ্গের গুরু মায়েরা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। বর্তমানে গ্রেপ্তার চার আসামিকে রমনা থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। রিমান্ডে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে আর কারা জড়িত তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে। যারাই জড়িত থাকুক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

শেয়ার করুন