অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের অর্থনীতি
ফাইল ছবি

অনেক আগে থেকেই প্রতিবছর বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশের বিপুল অঙ্কের অর্থ । প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি চলে আসছে-এটিও পুরোনো সমস্যা। এসবের সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক পরিস্থিতি। সবকিছু মিলে সংকট দেখা দিয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। এর ফলস্বরূপ সৃষ্টি হয়েছে জ্বালানি সংকট। এ সূত্র ধরেই এসেছে বিদ্যুৎ সংকট।

তাছাড়া গত কয়েক মাস ধরে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলেছে বিভিন্ন পণ্যের দাম। কিন্তু সে তুলনায় বাড়ছে না মানুষের আয়। ফলে তাদের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এতে দারিদ্র্যসীমার কিছুটা উপরে থাকা মানুষও দরিদ্র হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশে, যা মে মাসে ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর আগে কখনো এত বেশি মূল্যস্ফীতি হয়নি।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ‘মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে অর্থনীতির সব খাতে তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন এবং এ তদারকি নিশ্চিত করতে হবে কঠোরভাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যস্ফীতির প্রভাবের পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের দুর্নীতির কারণেও দ্রব্যমূল্য বাড়ছে।’ কাজেই ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক জীবনে যাতে বিপর্যয় নেমে না আসে, সেজন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও মনোযোগী হওয়া উচিত সরকারের।

যে কোনো সংকট মোকাবিলায়ই রাজনৈতিক উপলব্ধি, সরকারের সদিচ্ছা এবং সঠিক সিদ্ধান্তের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। কেননা সমস্যা কখনো বলেকয়ে আসে না। যখন আসে, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও সতর্কতা না থাকলে তা বড় আকারের সংকট হয়ে আসে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা রোধে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যদি কঠোর হতো এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিত, তাহলে এ খাতে জালিয়াতি ও অর্থ পাচার বন্ধ হতো। সেক্ষেত্রে আজ হয়তো রিজার্ভে ঘাটতি হতো না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কার্যকর জবাবদিহিতার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দেশে গ্যাস উত্তোলনে নজর দেওয়া হলে আজ পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুতের লোডশেডিং দিতে হতো না।

যদিও আমরা এসব বিষয় নিয়ে অনেক আগে থেকেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছি; তারপরও দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করে আমাদের অর্থমন্ত্রীর মনে যখন যা আসে তাই বলে যাচ্ছেন। আমরা মনে করি, এভাবে মনগড়া কথাবার্তায় একটি দেশের অর্থনীতির মজবুত ভিত্তি গড়ে উঠতে পারে না। সুতরাং অর্থনীতির ভিত্তিকে একটি শক্তিশালী অবস্থায় দাঁড় করাতে হলে যারা অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ আছেন তাঁদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।

শেয়ার করুন