সম্প্রতি ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকায় উল্লিখিত বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্টটি ত্রুটিপূর্ণ এবং পক্ষপাতদুষ্ট বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও তার স্ত্রী দুটি প্লট পেয়েছেন। স্বামী-স্ত্রীকে দুটি প্লট দেয়ার সুযোগ নেই।’ উক্ত রিপোর্টে রাজউকের ১৯৬৯ সালের রুলসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশ ছিল একটি উপনিবেশিক রাষ্ট্র। স্বাধীন বাংলাদেশে জনস্বার্থবিরোধী উপনিবেশিক আইন অনুসৃত হতে পারে না।
প্রসঙ্গত বলা যায়, রাজউক যখন উত্তরায় প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি দেয় আমি তখন একটি প্লটের জন্য আবেদন করতে চাইলে আমার প্রয়াত ভগ্নিপতি এটর্নি জেনারেল আমিনুল হক আমাকে আবেদন করতে নিষেধ করেন। তার ধারণা ছিল রাজউকের আইন অনুযায়ী আবেদন করার যোগ্যতা আমার নেই। কেননা তখন আমি উত্তরাধিকারী সূত্রে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে দেড় কাঠা জমির মালিক হয়েছিলাম। সরকারি আইন লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কায় আমি সে সময় প্লটের জন্য আবেদন করিনি। জানা গেছে, অনেকে তথ্য গোপন করে ঢাকায় প্লট থাকা সত্ত্বেও তারা আবেদন করে উত্তরায় প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন। আমার জিজ্ঞাসা, এমন দূষিত আইন কেন করা হয় যাতে একজন নাগরিক মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তথ্য গোপন করতে বাধ্য হয়?
উক্ত রিপোর্ট সূত্রে জানা যায়, মোকতাদির সাহেব এবং তার স্ত্রী ফাহিমা খাতুনের আয়ের উৎস ছিল আলাদা। উভয়ে সরকারকে সম্পদের পৃথক হিসাব দিতেন এবং পৃথক আয়কর দিতেন। সবকিছু পৃথক থাকা সত্ত্বেও পৃথক প্লট পেতে আপত্তি কোথায়? বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও স্বামী-স্ত্রী দুজন আলাদা সত্তা। তারা জায়া ও পতি অর্থাৎ দম্পতি। পৃথক সত্তা হওয়ার কারণে অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের সুযোগ থাকে। বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে তারা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। কোনো প্লটের মালিক যদি একজন হয় তাহলে অপরজন তা থেকে বঞ্চিত হয়। (বর্তমানে দেশে বিবিধ কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা বহুগুণ বেড়ে গেছে।) বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে যিনি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন তাকে নতুন করে প্লট বরাদ্দ করার কোনো আইন বা ব্যবস্থা রাজউকের আছে বলে আমার জানা নেই।
দেশের নাগরিকদের সুরক্ষা দান করা প্রত্যেক সরকারের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। কোনো সরকার কখনো কোনো নাগরিককে তার বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। পাকিস্তান আমলে ১৯৬৯ সালের রাজউকের আইনে অযৌক্তিকভাবে, অন্যায়ভাবে একজন নাগরিককে তার বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, যা কোনো সভ্য দেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
উক্ত রিপোর্টটি টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুবিধা দেয়ার জন্য রাজউকের বিধিমালা পরিবর্তনের উদ্যোগ নিন্দনীয়।’
টিআইবি অনেক সময় সরকারের ভালো-মন্দ কাজের সমালোচনা করে অনেকের বিরাগভাজন হয়েছে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশংসাও অর্জন করেছে। কোনো বিষয়ে মন্তব্য করার ব্যাপারে টিআইবির সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। একজন প্রভাবশালীর কারণে যদি উপনিবেশিক আমলের দূষিত আইনের পরিবর্তন হয় এবং তাতে যদি অধিকার বঞ্চিত নাগরিকদের সুরক্ষা হয় তার নিন্দা না করে প্রশংসা করতে হয়। বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা না করে সব নাগরিক যাতে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা পায় সবার সেই লক্ষ্যে কাজ করা উচিত। গঠনমূলক সমালোচনা ও বক্তব্য জনগণের কাম্য।
লেখক : প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, ঢাকা।