‘জাতীয় ঐক্য’ গড়তে বিএনপি-গণফোরাম ঐকমত্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিরোধী রাজনৈতিক দলের ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ে সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে ঐকমত্য হয়েছে বিএনপি ও গণফোরাম। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকালে মোস্তফা মোহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একথা জানান।

ফখরুল বলেন, গণফোরামের সঙ্গে আলোচনা করে আামাদের এই বিশ্বাস জন্মেছে যে, সব রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে। এই যে ভয়াবহ দানবীয় সরকার এখন ক্ষমতায় আছে, যারা আমাদের সব অর্জনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তাকে সরিয়ে আমরা জনগণের একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করব এবং একটা পার্লামেন্ট তৈরি করব- এই ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। এই বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করার ব্যাপারেও একমত হয়েছি।

universel cardiac hospital

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই বৈঠকে গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর মামলা প্রত্যাহার, নির্বাচনকালে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা, সব দলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা এবং সেই কমিশনের পরিচালনায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সবার অংশগ্রহণমূলক একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।

ফখরুল বলেন, সেই নির্বাচনের পরে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের জাতীয় সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে দেশে যে অব্যবস্থা রয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে সেগুলোকে তৈরি করার ব্যাপারে অর্থাৎ রাষ্ট্রকে সংস্কার করার জন্য একটা প্রস্তাবও আমরা দিয়েছি।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে আমরা এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব, যেখানে জনগণের মালিকানা থাকবে একটি সুষ্ঠু অবাধ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।

মোস্তফা মোহসিন মন্টু বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে বিএনপির জাতীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং ঐক্যমতে পৌঁছেছি। চলমান এই যে বিশৃঙ্খলা জাতীয় পর্যায়ে আমরা দুইটি নির্বাচন দেখেছি ২০১৪ ও ২০১৮, এই দুইটি নির্বাচন জাতির কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

মন্টু বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন চাচ্ছি। এই নির্বাচনটা জনগণের স্বার্থে, মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে চেতনার কথা আমরা বলি সেই চেতনাটা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাবো। এই বিষয়ে আমাদের তরফ থেকে সবাই ঐক্যমতে পৌঁছেছি, আমাদের মধ্যে দ্বিমত নেই।’

গণফোরামের এই নেতা বলেন, ‘আগামীতে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা জাতিকে আহ্বান জানাচ্ছি এখান থেকে এক হওয়ার জন্য এবং আমরাও ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে যাবো।’

আরামবাগের ইডেন গার্ডেনে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির এই সংলাপ হয়। বিকাল ৪টায় বিএনপি মহাসচিব চার সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে গণফোরামের কার্যালয়ে যান।

বিএনপির প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী ও মিডিয়া সেলের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন।

সংলাপে গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু আট সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন নির্বাহী সহ-সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মহসিন রশিদ, মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, সভাপতি পরিষদ সদস্য আনসার খান, ফজলুল হক সরকার ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খান ফারুক।

সরকার বিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গড়তে তুলতে বিএনপি গত ২৪ মে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে। এই পর্যন্ত ১৮টি দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে তারা। এগুলো হলো- আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, সাইফুল হকের বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন।

২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে বিএনপি যাদের সঙ্গে এই পর্যন্ত সংলাপ করেছে সেগুলো হলো- জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি(এলডিপি), ইসলামী ঐক্যজোট, লেবার পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি(জাগপা), জাতীয় দল, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সাম্যবাদী দল, ডেমোক্রেটিক দল(ডিএল), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি(এনডিপি), ইসলামিক পার্টি, পিপলস লীগ ও ন্যাপ-ভাসানী।

শেয়ার করুন