ভারতের আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির সিলেবাস থেকে মওদুদীর বই বাদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জামায়াতে ইসলামীর আদর্শিক গুরু আবুল আলা মওদুদীর লেখা বই বাদ দিতে যাচ্ছে ভারতের প্রখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি (এএমইউ)। মওদুদীর ‘জিহাদ সম্পর্কিত আপত্তিকর’ রচনার সঙ্গে বাদ পড়ছে তুরস্কের আরেক ধর্মতাত্ত্বিক লেখক সাইয়েদ কুতুবের রচনাও। এই দুজনের বই সিলেবাস থেকে বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের এই বিশ্ববিদ্যালয়।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে বলেছে, এএমইউর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সিলেবাসে থাকা আবুল আলা মওদুদী আর সাইয়েদ কুতুবের লেখা নিয়ে আপত্তি ওঠে। বিএ এবং এমএ ক্লাসের শিক্ষার্থীদের তাদের লেখা বই পড়ানো হতো।

দুজনের লেখার বিষয়ে ‘আপত্তি’ উঠার পর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সিলেবাস থেকে তাদের লেখা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় এএমইউ। অর্থাৎ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের বিতর্কিত এই দুজনের বই আর সিলেবাসে পড়াবে না।

সম্প্রতি মওদুদীর ‘জিহাদ সম্পর্কিত আপত্তিকর’ লেখাটি নিয়ে ভারতের ২৫ জন শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি খোলা চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি, দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া এবং হামদার্দ ইউনিভার্সিটিতে ‘জিহাদ সম্পর্কিত আপত্তিকর’ বিষয় পড়ানো হয়। চিঠিতে তারা আবু আল-আলা আল-মওদুদির লেখা বই শিক্ষার্থীদের না পড়ানোর আহ্বান জানান।

এরপরই মওদুদী ও সাইয়েদ কুতুবের লেখা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি। এটি নিশ্চিত করেছেন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাফি কিদোয়াই।

তিনি বলেন, ‘ওই দুই লেখককে নিয়ে বিতর্ক এড়াতেই তাদের লেখা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুজনের লেখা সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পারিপাশ্বিক পরিস্থিতি বদলে গেছে। বর্তমানে তাদের লেখার প্রাসঙ্গিকতাও হারিয়েছে।’

সাফি কিদোয়াই বলেন, ‘তাদের লেখার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।…কিছু মানুষ এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তুলেছে তা সত্য। একারণে বিভাগ তাদের লেখা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামিক স্টাডিজের এক অধ্যাপক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘বিভাগের সিলেবাস থেকে ওই দুই লেখকের লেখা বাদ দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কারণ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তা নিয়ে বিতর্ক এড়ানোর জন্য।’

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্স প্রোগ্রামে অপশনাল পেপার হিসেবে ওই দুই লেখকের বই পড়ানো হয়। সেগুলোর শিরোনাম হচ্ছে ‘মাওলানা মওদুদী এবং তার চিন্তা,’ ও ‘সাইয়েদ কুতুব এবং তার চিন্তা’।

প্রসঙ্গত, ১৮৭৫ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের আলীগড়ে স্যার সৈয়দ আহমদ খানের একান্ত প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠা করা হয় মোহামেডান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ। পরবর্তীকালে সেটিই আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি নাম নিয়ে খ্যাত হয়। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুসলমানদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখে আসছে ভারতের এই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

শেয়ার করুন