মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে কাটছেই না সংকট

ডেস্ক রিপোর্ট

মালয়েশিয়া

গত বছরের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা চুক্তি হলেও এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি কর্মী যাওয়া। যদিও কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়া, খরচ ও আনুষঙ্গিক বিষয় নির্ধারণে পেরিয়ে গেছে ৮ মাস।

সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে ১৫টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে প্রায় দুই হাজারের বেশি কর্মীর নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হলেও সেই অর্থে কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী ইমরান আহমদ। অন্যদিকে ‘সিন্ডিকেটের’ মাধ্যমে কর্মী আনার প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকার অভিযোগে মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন চালাচ্ছে অভিযান। এর মাঝে ১৫ দিন নিয়োগকর্তাদের আবেদন স্থগিত রেখেছে মালয়েশিয়া সরকার।

universel cardiac hospital

গত ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ার সঙ্গে কর্মী নিয়োগে এক নতুন সমঝোতা চুক্তি করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। চুক্তি অনুযায়ী মালয়েশিয়া প্রান্তে কর্মীর খরচ সব নিয়োগকর্তার এবং বাংলাদেশ প্রান্তে কর্মীর খরচ প্রায় ৭৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয় মন্ত্রণালয়। গত মাসে এই খরচ ঘোষণা করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী।

এই ঘোষণার পর কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)।

মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তির পর থেকেই কর্মী নিয়োগে ‘সিন্ডিকেট’-এর বিষয়টি উঠে আসে। ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের অভিযোগ থাকলেও ঢাকায় এসে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী বলেছেন, এটি মালয়েশিয়ার কেবিনেট নির্ধারণ করবে।

যদিও মালয়েশিয়ায় ফিরে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, কেবিনেট আগেই তার অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি ঢাকা সফর করেছিলেন।

এদিকে বিদেশি কর্মীদের জন্য কোটা পেতে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে নিয়োগকর্তা বা এজেন্টদের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন (এমএসিসি) আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাতে পৃথক অভিযানে এই দুজনকে গ্রেফতার করে এমএসিসি। এদের একজন ব্যবসায়ী এবং অন্যজন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক। গ্রেফতারকৃত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এক নিয়োগকর্তা এজেন্টের কাছ থেকে ১০ লাখ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে তদন্ত করা হয়।

অন্য জনের বিরুদ্ধে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বেস্টিনেটকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ছিল। দু’জনকেই ৪ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট ইরজা জুলাইখা বোরহানউদ্দিন।

মালয়েশিয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের ডিরেক্টর অব ইনভেস্টিগেশন দাতুক সেরি হিশামুদ্দিন হাশিম গত বুধবার (৩ আগস্ট) রিমান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘এমসিসি আইন ২০০৯-এর ১৬ (এ) ধারায় মামলাটির তদন্ত করা হচ্ছে।’ আইটি সলিউশন প্রদানকারী বেস্টিনেটের অনিয়মের বিষয়ে এমসিসি’র তদন্ত নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটির তদন্ত এখনও চলমান থাকায় মন্তব্য করা উচিত হবে না।’

এর আগে গ্রেফতার আট জনের মধ্যে ছয় জনকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।

অন্যদিকে, একজন পুরুষ ও একজন নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বক্তব্য রেকর্ড করে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।

আবার মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য দেশটির নিয়োগদাতাদের আবেদন প্রক্রিয়া সাময়িক স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়। শুক্রবার (৫ আগস্ট) দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় এক নোটিশে এই ঘোষণা দেয়।

নোটিশে বলা হয়, ১৫ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নিয়োগ আবেদন বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ কর্মী নিয়োগের জন্য কোম্পানিগুলো দেশটির সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য যে আবেদন করে, তা সাময়িক স্থগিত রাখা হবে। এতে চলমান কলিং ভিসার কার্যক্রম বা বাংলাদেশসহ বিদেশি কর্মী নিয়োগের অন্য প্রক্রিয়ায় কোনও সমস্যা হবে না।

মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আমাদের পক্ষ থেকে পুরোপুরি খোলা। তারপরও সে দেশে পাঠানোর মতো কর্মীর সংকট দেখা যাচ্ছে। মানুষ যাচ্ছে না, কারণ অন্য তরফ থেকে জিনিসটা এগোচ্ছে না। এখানে কোনও সমস্যা থাকলে আমরা দেখবো।

তিনি আরও বলেন, আমরা ১৩টি এজেন্টের মাধ্যমে এরই মধ্যে দুই হাজার ২০০ জনকে অনুমতি দিয়েছি। কিন্তু আমরা আরও বেশি করে কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠাতে চাই।

শেয়ার করুন