‘শেখ কামালকে অনুসরণ করলে কেউ বিপথগামী হবে না’

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি একজন তুখোড় ছাত্রনেতা ছিলেন। ঢাকা শহরে এমন কোনো মিটিং মিছিল হয় নাই, যেখানে তাঁর উপস্থিতি ছিল না। তিনি নিজে একজন ক্রীড়ামোদী ও ক্রীড়াবিদও ছিলেন। তিনি ফার্স্ট ডিভিশনে ফুটবল, ক্রিকেট ও বাস্কেটবল খেলতেন। তিনি নাটক করতেন, সংগীত চর্চা করতেন, নিজে সেতার বাজাতেন। তিনি আবাহনী করেছিলেন, তিনি স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী নামে একটি শিল্পী গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলেন, যেটি এখন আর নেই। ঢাকা থিয়েটার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য চক্রও তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

৭ আগস্ট (রোববার) বাংলাদেশ ছাত্র লীগ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখার উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ কামাল ও শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, অনেকেই বলেন, আপনি এতো শেখ কামালের কথা বলেন কেন? আমি এজন্যই বলি, তারুণ্যের প্রতীক শেখ কামাল জীবনে কোনো দিন চা পান করেন নাই। মাদক জাতীয় কোনো বস্তু গ্রহণ করা তো দূরের কথা, তিনি স্পর্শও করেন নাই। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে এই কথা বলতে পারি। কাজেই তাঁকে যদি কোনো তরুণ ছাত্র বা যুবক অনুসরণ করে সে কখনো বিপথগামী হবে না।

তিনি আরও বলেন, আমি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, পাকিস্তানের ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়েছি। এই লড়াইয়ের জন্য সমগ্র দেশের মানুষকে যিনি ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন তাঁর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সুতরাং তাঁকে আমরা স্মরণ করি এবং স্মরণ করতেই হবে।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর বুকে বাংলা ভাষাভাষীদের একটি মাত্র রাষ্ট্র আছে, সেটি হলো বাংলাদেশ। তবে নতুন এই দেশটিকে সৃজন করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্য নিয়ে তাঁর আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করেছেন। সেসময় তাঁর সহযোদ্ধা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এএইচএম কামরুজ্জামান।

তিনি বলেন, আমরা সবসময় শিক্ষার ওপর জোর দেই। বঙ্গবন্ধুর আগে এদেশে যে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা ছিলো, সেটি জেলা পরিষদের ও স্থানীয় সরকার পরিষদের অনুদানের ওপর চলত। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একদিনে জাতীয়করণ করে সকল শিক্ষককে সরকারি শিক্ষক করেছিলেন। তিনি দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কারিগরি শিক্ষার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছিলেন।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, এখন অনেকেই আমাদেরকে বিভিন্নভাবে চিত্রিত করা চেষ্টা করেন। তবে আমাদেরকে যেভাবেই চিত্রিত করা হোক না কেন, বলতে বাধ্য হবে আমরাই এ দেশটাকে সৃজন করেছি। স্বীকার করতেই হবে যে এদেশে উন্নয়নের পথ আমরা সৃজন করে দিয়েছি। তবে আমাদেরও সমস্যা আছে, কেননা আমরা তো বিশ্বব্যবস্থার বাইরে নই, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ হলে আমাদের ওপর এটির প্রভাব পড়ে। তাইওয়ান-চীন সংঘাতের মুখোমুখি হলে আমাদের ওপর এটির প্রভাব পড়ে, এই প্রভাব আমরা এড়াতে পারি না, এড়ানো সম্ভবও না। তারমধ্যেও আমরা বেঁচে থাকি, আমরা লড়াই করি, আমরা সামনে এগিয়ে যায়। করোনা চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশের অবস্থাটা বিচার বিশ্লেষণ করলেই এটি বুঝা যাবে। আমাদের সবাইকে এটি একটু বিচার-বিশ্লেষণ করে চলা উচিত।

সন্তানদের প্রতি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদান সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সন্তানদের জন্ম দেখেছেন কিন্তু তাদের বেড়ে উঠা দেখতে পারেননি, কেননা তিনি কারায় কারায় জীবন কাটিয়েছেন। কারাগারে তাঁকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাহলে তাঁর ছেলে মেয়েরা বিপদগামী হলো না কেন? কারণ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব তাঁর সন্তানদের আদরে যত্নে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলেছেন। শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে তুলেছেন। শেখ কামাল এমএ পরীক্ষা দিয়েছিলেন কিন্তু মারা যাওয়া তাঁর রেজাল্ট হয়নি। শেখ হাসিনাকে এমএ পর্যন্ত পড়িয়েছেন। বর্তমানে আমাদের মায়েরা কী সেটা পারে? পারে না।

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সভাপতি মো,কামরুল ইসলাম শাকিলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শিব্বির আহমেদ সাব্বিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী হারিছুর রহমান, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট জহিরুল ইসলাম ভুইয়া, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল, সাধারণ সম্পাদক শাহদাত হোসেন শোভন প্রমুখ।

শেয়ার করুন