নারীর অধিকার রক্ষায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ চাই

শেখ রোকেয়া

রাজউক
ফাইল ছবি

রাজউক দি ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ল্যান্ড এ্যলটমেন্ট) রুলস ১৯৬৯ অনুসারে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের সংবিধান অনুমোদন লাভ করে ১৯৭২ সালে। যেখানে বলা হয়েছে, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন বা বিধি অকার্যকর হবে। রাজউক দি ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ল্যান্ড এ্যলটমেন্ট) রুলস এ স্বামী বরাদ্দ পেলে স্ত্রী বরাদ্দ পাবেন না; এই বিধানটি সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধায় এটি অকার্যকর। কেননা সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘অন্য কোনো আইন বা ঐ আইনের কোনো অংশ যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।’ তাহলে এটি স্পষ্ট যে, সংবিধান বলবৎ হবার পরে রাজউকের দি ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট (ল্যান্ড এ্যলটমেন্ট) ১৯৬৯ রুলটির যে অংশটুকু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সে অংশটুকুর আর কার্যকারিতা নেই।

বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করিবেন।’ সংবিধানে সমতা বিষয়ে ১৯(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘ জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন।’ সংবিধানের ৪২(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক নাগরিকের (নারী বা পুরুষ) সম্পত্তি অর্জন, ধরন, হস্তান্তর বা অন্যভাবে বিলি-ব্যবস্থা করার অধিকার থাকিবে।’ এখানে অনুচ্ছেদের মূল বিষয় হলো যে, কোনো নারীকে বিবাহিত হবার কারণে কিংবা স্বামীর সম্পদ থাকার কারণে তাকে সম্পদ গ্রহণ বা অর্জন থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। একজন নারীকে একটি স্বতন্ত্র ব্যক্তিসত্তা হিসেবে মর্যাদা সংবিধানে দেয়া হয়েছে।

যে কোনো কারণেই স্বামীর সম্পদ আছে, এই ছুতোয় তাকে সম্পদ গ্রহণে বা অর্জনে বাধা দেয়া যাবে না। ঢাকা শহরে যেকোনো ডেভেলপারের নিকট থেকে স্বামী-স্ত্রী দুজনের নামে গ্রহণে কিন্তু কোনো বাধা নেই; তাহলে একজন নারী, যার নিজস্ব আয় আছে, নিজস্ব টিআইএন আছে, তিনি কোনোভাবেই তার স্বামীর আয়ের ওপর নির্ভরশীল নন, তাহলে তিনি কেন রাজউক বিধি দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হবেন! যেখানে একজন নারী অন্য যেকোনো জায়গা থেকে স্বামীর প্লট থাকার কারণে নিজের প্লট ক্রয়ে কোনো আইন দ্বারা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন না, সেখানে রাজউকে কেন এমন উদ্ভট প্রাকটিস থাকবে, যার দরুন একজন স্বউপার্জন নারী নিজের যোগ্যতায় প্রাপ্ত ‘আত্মমর্যাদা সম্পন্ন নারীর সম্পত্তি গ্রহণে বাধার কারণ হবে?

একটি বিষয় খুবই মর্মস্পর্শী যে, নারী তার স্বামীর প্লট থাকার কারণে নিজস্ব আয় ও টিআইএন থাকা সত্ত্বেও তিনি প্লট লাভের অযোগ্য হবেন! এটি নিঃসন্দেহে বড় ধরনের বৈষম্য। নারী-পুরুষের বৈষম্য বিলোপে সিডও দলিলে বাংলাদেশ একটি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ আজ নারীর সকল ধরনের বৈষম্য বিলোপ সাধনে সামনের সারিতে অবস্থানকারী রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও এদেশে বৈষম্য সৃষ্টি করে এমন বিধি অনতিবিলম্বে সংশোধন হওয়া একান্ত প্রয়োজন। এসডিজির ৫ নম্বর গোলে নারীর সর্বক্ষেত্রে সমতার কথা, অর্থাৎ সম্পদ ক্রয় অর্জন, রক্ষণাবেক্ষণসহ সকল প্রকার সমতার কথা বলা হয়েছে, যেটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ।

এছাড়া স্বামী-স্ত্রী সারা জীবন যে একসঙ্গে থাকবেন, তার নিশ্চয়তা কী কেউ দিতে পারেন? নিশ্চয়ই পারেন না। সংসার জীবনের কোনো এক সময়ে বিবাহ বিচ্ছেদের মাধ্যমে সংসারে বিপর্যয় নেমে এলে নারী সম্পদহীন হয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় পরতে পারেন। আমাদের ডেলটা প্ল্যান পরিকল্পনা, ভিশন ২০৪১, ৮ম পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও নারী উন্নয়ন ও জেন্ডার সমতার বিষয়ে বলা হয়েছে।

অতএব, দি ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট ( ল্যান্ড এ্যলটমেন্ট)-এর সংশ্লিষ্ট ধারাটি সংবিধানের নারীর মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যুগোপযোগী করা অতীব প্রয়োজন বলেই আমরা মনে করি। যারা ধনী বা বিত্তশালী তারা ডেভেলপারের নিকট থেকে চড়া মূল্যে প্লট কিনতে পারেন। কিন্তু যারা আমাদের মতো সাধারণ চাকরিজীবী তাদের পক্ষে চড়া দামে প্লট কিংবা ফ্ল্যাট কেনার সামর্থ্য নেই। এক্ষেত্রে আমার স্বামীর প্লট থাকার কারণে যদি আমি আমার নিজের আয়ে রাজউক কর্তৃক ঘোষিত ফ্ল্যাট কিংবা প্লট পাওয়া থেকে বঞ্চিত হই, এ কষ্ট রাখি কোথায়? তাহলে কেন আমি এতো কষ্ট করে চাকরি করি বা আয় করি? এছাড়া প্রাইভেট ডেভেলপারের কাছ থেকে প্লট কিনতে গেলে একজন নারীর প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকিও অধিক থাকে কিন্তু রাজউক কর্তৃক বরাদ্দ পেলে তার সেই ঝুঁকি থাকে না। ‘ম্যাডাম’ আপনারা নারীর কথা বলেন, অসহায়ের কথা বলেন; কাজেই আপনার কাছে অনুরোধ, আমরা নারীরা যাতে বঞ্চিত না হই, তারজন্য আপনার সুদৃষ্টি চাই। আপনার প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাপূর্ণ কৃতজ্ঞতা।

শেখ রোকেয়া
৪৫, আগারগাঁও, ঢাকা।

শেয়ার করুন