জুলাইয়ের তীব্র তাপপ্রবাহে ব্রিটেনে হাজারো মানুষের মৃত্যু হতে পারে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাজ্যে তীব্র তাপপ্রবাহ
যুক্তরাজ্যে তীব্র তাপপ্রবাহ। ফাইল ছবি

ইউরোপের অধিকাংশ দেশের মতো ব্রিটেনেও গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হয়েছে। গত ১৯ জুলাই তাপমাত্রা পরিমাপ স্কেলে পারদ ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রিতে পৌঁছে গিয়েছিল। এটি ২০১৯ সালের সর্বোচ্চ রেকর্ড ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিপদের শঙ্কা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। কেননা, ৯ আগস্ট ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিস আগামী দিনে আরও চরমভাবে তাপমাত্রা বাড়ার সতর্কতা জারি করেছে।

দেশটিতে গরম আবহওয়ার ওপর ভিত্তি করে কোনো ব্যবস্থা তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। ইংল্যান্ডের মাত্র ২ শতাংশ বাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক বাড়িতে, বিশেষ করে ফ্ল্যাটগুলো অতিরিক্ত গরম হয় কারণ তাদের বায়ু চলাচল ব্যবস্থা দুর্বল এবং সূর্যের তাপ প্রবেশ করে। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে অতিরিক্ত মৃত্যু, আগের সব রেকর্ডের তুলনায় অনেক বেশি। ২৯ জুলাই শেষ হওয়া দুই সপ্তাহের হিসাবে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেই সময়ের মধ্যে তিন হাজার ৫৮ অতিরিক্ত মৃতের সংখ্যা নিবন্ধন করা হয়েছে সেখানে। সম্প্রতি ইউরোপের অন্যান্য অংশেও অতিরিক্ত মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

তাহলে কি তাপপ্রবাহ এত মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী?

পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা বলে যে উচ্চ তাপমাত্রা মৃত্যুর একটি বড় কারণ। অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বা হৃদরোগের মতো অবস্থাকে আরও জটিল করে তোলে। ইউরোপে ২০০৩ সালের তাপপ্রবাহ, মহাদেশজুড়ে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যুতে প্রভাব ফেলে।

ব্রিটেনে ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস জানায়, সেদিন এবং এরপর থেকে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তথাকথিত ‘হার্ভেস্টিং ইফেক্ট’[মৃত্যুহার স্থানচ্যুতি এমন একটি ঘটনা যেখানে অতিরিক্ত মৃত্যুর সময়কাল (অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মৃত্যু) ও মৃত্যু কম হওয়ার সময়কাল (অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে কম মৃত্যু) নির্দেশ করে। এটি মূলত পরিবেশগত ঘটনা যেমন তাপমাত্রা, ঠাণ্ডা আবহাওয়া, মহামারি, দুর্ভিক্ষ বা যুদ্ধের কারণে ঘটে থাকে।

এভাবে মৃত্যুর কারণ ও প্রভাব আলাদা করা কঠিন। মৃত্যু সনদে স্পষ্টভাবে ‘তাপ’ উল্লেখ না করলে তা মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ কিনা তা অবিলম্বে জানার খুব কম উপায় রয়েছে। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে কোভিড-১৯ -যা সম্প্রতি কয়েক বছরে বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ। তবে এটি তুলনীয় নয়। যদিও গত দুই সপ্তাহ ধরে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে কোভিড -১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যা ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। যেখানে অতিরিক্ত আটশ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে কারও মৃত্যু তাপ দ্বারা ত্বরান্বিত হতে পারে।

অন্যান্য কারণ থেকে গরম আবহাওয়াকে পৃথক করার জন্য পরিসংখ্যানগত মডেলিং ব্যবহার করে ‘তাপজনিত মৃত্যু পর্যবেক্ষণ’ প্রতিবেদন দিয়েছে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংস্থা। বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, ২০২০ ও ২০২১ সালে তাপপ্রবাহ ইংল্যান্ডে গড়ে দুই হাজার ৯৫ জন মানুষের মৃত্যুতে প্রভাব ফেলেছিল। এটি ২০১৬ ও ২০১৯ এর মধ্যে পর্যবেক্ষণ করে বের করা সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুণ। এর কারণ সম্ভবত কোভিড মানুষের মৃত্যুকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী দশ জনের মধ্যে নয় জনের মৃত্যু হয়েছে তাপপ্রবাহজনিত কারণে।

জলবায়ু উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ এটির সঙ্গে বাড়িঘর উপযোগী করে খাপ খাইয়ে না নিলে তাপেও মৃত্যু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ব্রিটিশ সরকারের জলবায়ু নীতি যাচাই-বাছাই করা একটি স্বাধীন সংস্থা, ক্লাইমেট চেঞ্জ কমিটি ধারণা করছে যে, বার্ষিক গরম আবহাওয়ায় মৃত্যু এখন প্রায় দুই হাজার থেকে ২০৫০-এর দশকে সাত হাজার বৃদ্ধি পেতে পারে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

শেয়ার করুন