খালেদ মোশাররফ বঙ্গবন্ধুর প্রীতিতে ক্ষমতা দখল করেন নাই: মোকতাদির চৌধুরী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, ‘চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, ১৯৭৫ সালে খালেদ মোশাররফ ক্ষমতা দখলের পরপরই বঙ্গবন্ধুর সকল খুনিকে থাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করেছিলেন, একেবারে নিরাপদভাবে তাদেরকে তিনি বিমানে উঠিয়ে থাইল্যান্ডে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তাছাড়া খালেদ মোশাররফ যার কাছ থেকে মেজর জেনারেল পদবী গ্রহণ করেছিলেন, তার নাম হলো খন্দকার মোশতাক।

আজ ১৫ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, খালেদ মোশাররফ সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণে সেদিন ক্ষমতা দখল করেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রীতিতে সেদিন ক্ষমতা দখল করেন নাই।

প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিপরিষদের ৯৮% লোক সেদিন মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগদান করেছিল। বঙ্গবন্ধুর খুবই বিশ্বস্ত একজন লোক কর্ণেল ওসমানী, অথচ তিনি ছিলেন মোশতাকের সামরিক উপদেষ্টা। এই ফ্যাক্টগুলো আমরা অনেকেই ভুলে গেছি, এগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে। আমি এই কথাগুলো বলছি আত্মোপলব্ধি কারার জন্য। আত্মোপলব্ধি করতে না পারলে আমাদের সামনের দিকে আগানো কঠিন হবে।

তিনি বলেন, মোশতাকের সহযোগি সারাদেশে কারা কারা ছিল?। ফারুক, ডালিম, নূর এই কয়েকজন খুনি, এখানেই শেষ? মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়েছিল এখানেই শেষ? নাকি এর পেছনেও আরও কোনো ঘটনা আছে, সেটাও তো আমাদের জানতে হবে। এই শহরে তাহের উদ্দিন ঠাকুরের কোনো প্রভাব ছিল কিনা? এজন্যই আমি মাঝে মাঝে বলি এবং আমার দাবি এটা- বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করতে একটা তদন্ত কমিশন হওয়া উচিত। কেননা, সেসময় আওয়ামী লীগের পুরো মন্ত্রিসভা মোশতাকের সাথে ছিল, সুতরাং আমাদের বুঝতে হবে ঘরের শত্রু বিভীষণ। এই বিভীষণদের চিহ্নিত করতে না পারলে ভবিষ্যত পরিস্থিতি কঠিন হতে পারে।

পঁচাত্তর পরবর্তী প্রতিরোধ যোদ্ধা মোকতাদির চৌধুরী আরও বলেন, ৭৫ পরে সারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলার জন্য কোনো লোক ছিল না। আমি যেহেতু তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে কথা বলেতে পেরেছি, মিছিল করতে পেরেছি, সেহেতু অন্যরাও বলতে পারতো,কিন্তু চেষ্টা করেনি, কারণ মনে তাগিদ ছিল না। এখন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যতটা দরদ নিয়ে কথা বলা হয়, তখন ততটা দরদ ছিল না। সেসময় এই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমাদের পক্ষে ছিলেন মহীয়সী নারী দিলারা হারুন। তিনি আমাদের কথা শুনে ছিলেন, আশ্রয় দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, আমরা যতটা বঙ্গবন্ধুর কথা মুখে বলি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ততটা বুকে ধারণ করি না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রথম শর্তই ছিলো মানুষকে ভালোবাসা। মানুষকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে আমাদের ত্রুটি আছে। আমরা মানুষকে ভালোবাসতে শ্রেণিভেদ করি (ধনী, গরীব, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান) যা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তাঁর আদর্শকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তাঁকে যারা হত্যা করেছে তাদের যুদ্ধটা ছিলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, বৈষম্যহীন সমাজের বিরুদ্ধে। তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশে পাকিস্তানের আদর্শের পুনরাবৃত্ত করেছিলো।

জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার প্রমুখ।

শেয়ার করুন