যুদ্ধ বন্ধে জেলেনস্কির সঙ্গে গুতেরেস–এরদোয়ানের আলোচনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। এ হামলার কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ইউক্রেন সফরের মধ্যে খারকিভে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত বুধবারও ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে সাতজন নিহত হন। খবর এএফপির

গত বুধবার ইউক্রেনে পৌঁছেছেন গুতেরেস। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা শুরুর পর এটা তাঁর দ্বিতীয় ইউক্রেন সফর। গত এপ্রিলে তিনি ইউক্রেনে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্টে ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন। তার আগে মস্কোয় গিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। আর যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো ইউক্রেন সফরে এরদোয়ান।

ইউক্রেনে রুশ সেনা নিয়ন্ত্রিত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে উদ্বেগ বেড়েছে। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে দুই বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের ফলে পারমাণবিক দুর্ঘটনার আতঙ্ক সবখানেই। ইউক্রেনের অভিযোগ, রুশ সেনারা ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ব্ল্যাকমেল করছে। সেখানে তারা ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছে। তবে মস্কোর পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

খারকিভ অঞ্চলের প্রধান ওলেগ সাইনেগোবভ বলেন, মস্কোর সেনারা রাশিয়া থেকে কমপক্ষে আটটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এতে এক শিশুসহ তিনজন নিহত হন। আটজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। খারকিভের দক্ষিণ–পশ্চিমে ক্রাশনোগারাদ শহরে পৃথক হামলায় একটি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে। সেখানে দুজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন।

খারকিভের হামলা নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মাইখাইলো পোদোলিয়াক বলেন, ‘খারকিভের ১৭৫ দিনের বিভীষিকা। দৈনন্দিন সন্ত্রাস ও আবাসিক ভবন এবং বেসামরিক লোকজনের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটছে।’

হামলার মধ্যেই বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লিভিভে জেলেনস্কির সঙ্গে গুতেরেস ও এরদোগানের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকের আগে গুতেরেসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, জাতিসংঘের প্রধান, ইউক্রেন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট খাদ্যশস্য রপ্তানি নিয়ে করা চুক্তির পাশাপাশি চলমান যুদ্ধ বন্ধে রাজনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করবেন। তিনি আরও বলেন, আলোচনায় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইস্যু উত্থাপিত হবে সন্দেহ নেই।

এর আগে বুধবার (১৭ আগস্ট) রাতে জেলেনস্কি তাঁর নিয়মিত বিবৃতিতে বলেন, গুতেরেসের সঙ্গে তিনি ইউক্রেনের জন্য প্রয়োজনীয় ফলাফল পেতে কাজ করবেন।

জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো দিয়ে ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানির চুক্তি করে মস্কো ও কিয়েভ। চুক্তির শর্ত মেনে ইউক্রেনের তিনটি বন্দর থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানিও শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার গুরুত্বপূর্ণ ওদেসা বন্দর সফরে যাবেন গুতেরেস। এরপর তিনি তুরস্কে স্থাপন করা জয়েন্ট কো–অর্ডিনেশন সেন্টারে (জেসিসি) যাবেন। জেসিসি মূলত ইউক্রেন, রাশিয়া ও তুরস্কের কর্মকর্তারা জাহাজ পর্যবেক্ষণের জন্য সমন্বয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টের প্রথমার্ধে ২১টি জাহাজ ৫ লাখ ৬৩ হাজার টন খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্য নিয়ে ইউক্রেনের বন্দর ছেড়েছে। এর মধ্যে জাতিসংঘের খাদ্যসহায়তা বহনকারী একটি জাহাজ ২৩ হাজার টন গম নিয়ে গত বুধবার বসফরাস প্রণালিতে পৌঁছেছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল বলেছে, তারা জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেনি। সেখানে শুধু পাহারা দেওয়ার জন্য সেনা রয়েছে। তারা কিয়েভের বিরুদ্ধে ওই কেন্দ্রে হামলার উসকানির অভিযোগ এনেছে।

এদিকে জেলেনস্কি জাপোরিঝিয়া এলাকা থেকে রুশ সেনাদের দ্রুত সরিয়ে নিতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কোনো শর্ত ছাড়াই যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে অস্ত্র ও রুশ সেনাদের সরতে হবে। এর আগে তিনি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে হামলা চালানো রুশ সেনারা ইউক্রেনের বিশেষ লক্ষ্যবস্তুতে থাকবে।

এর আগে বুধবার সকালে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রুশ সেনাদের দখলে থাকায় সেটি নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে এবং পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়েছে। তিনি জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জরুরি পরিদর্শন করার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানান।

শেয়ার করুন