দলীয় প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে ভারতের কংগ্রেস দলে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। দলীয় সূত্র এনডিটিভিকে বলছে, কংগ্রেসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে রাজি হননি রাহুল গান্ধী। এ ব্যাপারে দলীয় সদস্যরা তাঁকে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করেছিলেন, তবে তা সফল হয়নি।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে সোনিয়া গান্ধী কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করতে চান না বলে আগেই জানিয়েছেন। সভাপতি হিসেবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রের নাম আলোচনায় থাকলেও উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর তাতে ভাটা পড়ে। গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ সভাপতি হতে পারেন কি না তা নিয়ে আলোচনা রয়েছে।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের পরাজয়ের পর রাহুল গান্ধী পদত্যাগ করেন। এরপর দলীয় সদস্যরা অনুরোধ করলেও রাহুল গান্ধী পদে ফেরেননি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সোনিয়া গান্ধীও কংগ্রেসের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে চান না। উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর পরাজয়ের কারণে তাঁকে নিয়ে দল খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছে না।
১৩৭ বছরের পুরোনো কংগ্রেস দল নেতৃত্বে এখনো গান্ধী পরিবারকেই দেখতে চায়। তবে দলীয় সূত্র বলছে, কংগ্রেসের প্রধান হিসেবে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের (৭১) নামও এসেছে। অর্থাৎ, ১৯৯৮ সালের পর প্রথমবারের মতো কংগ্রেসের সভাপতির নামের তালিকায় গান্ধী পরিবারের বাইরের কারও নাম এল।
ঐকমত্যের অভাবে দলীয় প্রধান বেছে নিতে কংগ্রেসের দলীয় নির্বাচন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। তবে এ বিষয়ে কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ভক্তচরণ দাস এনডিটিভিকে বলেন, ‘রাহুল গান্ধী বলেছেন, দলীয় প্রধান হওয়ার ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ নেই। তবে আমরা তাঁকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বোঝাতে চেষ্টা করছি। যদি তিনি দলীয় প্রধানের দায়িত্ব নিতে না চান, তাহলে তাঁকে বলতে হবে কীভাবে এই পদ পূরণ হবে।’
দলীয় প্রধান হতে আগ্রহ না দেখালেও রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। আগামী মাসে তিনি বড় ধরনের সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। তিনি তামিলনাড়ু রাজ্যের উপকূলবর্তী কন্যাকুমারী থেকে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শুরু করবেন। কন্যাকুমারী থেকে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসের পদযাত্রা ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শুরু হবে। ভারতের ১২টি রাজ্যে এই পদযাত্রা হবে।
হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডা বলেন, ‘আমরা পদযাত্রার আয়োজন করছি। রাহুল গান্ধী এতে নেতৃত্ব দেবেন। তবে আমরা দলীয় সভাপতি নির্বাচনের ব্যাপারে নিশ্চিত নই।’
কয়েক বছর ধরেই কংগ্রেস দলে নেতৃত্বের সংকট ঘনীভূত হয়েছে। বিভিন্ন নির্বাচনে পরাজয়ের কারণে এবং দল থেকে ঊর্ধ্বতন নেতাদের পদত্যাগের কারণে এ সংকট আরও বেড়েছে।
গত মার্চ মাসে সোনিয়া গান্ধী বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয় নিয়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পদত্যাগ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রও দল থেকে পদত্যাগ করবেন বলে প্রস্তাব দেন সোনিয়া। ওই বৈঠকে দলের নির্বাচন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের জন্য সোনিয়াকে অনুরোধ জানানো হয়।
রাজস্থানের উদয়পুরে গত মে মাসে দল পুনর্গঠন নিয়ে বড় ধরনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে নতুন দলীয় প্রধান বেছে নিতে নির্বাচনের সময়সীমা ঠিক করে দেয় কংগ্রেস। বৈঠকে জি-২৩–এর নেতারা সাংগঠনিক নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা নিযুক্তির দাবি জানান। দুই বছর আগে একই দাবিতে ২৩ শীর্ষ নেতা সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লেখেন। তাঁরাই জি–২৩ নামে পরিচিত।