চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকায় উন্নতির দাবিতে টানা আন্দোলন করে যাচ্ছেন দেশের চা-শ্রমিকরা। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা কর্মবিরতি ও রাজপথ অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। তবে এখনও সমস্যাটির সমাধান না হওয়ার সংবাদ অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কেননা শ্রমিক আন্দোলনের ফলে যথাযথ সময়ে চা উত্তোলন সম্ভব না হওয়ায় কেবল বাগান মালিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না; একইসঙ্গে চা রফতানিতেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য মোটেও স্বস্তিকর নয়।
আমরা মনে করি, একুশ শতকের এই সময়ে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে কোনো একটি পরিবার কেন, একজন ব্যক্তির সংসারও চালানো সম্ভব নয়। তাছাড়া আমাদের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী একজন কৃষি শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি তিন কেজি ৩৭০ গ্রাম চালের সমপরিমাণ। বর্তমানে যেখানে গ্রামের একজন মজুরকে সারা দিনের জন্য মজুরি দিতে হয় কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা সেখানে চা-শ্রমিকদের এই স্বল্প মজুরি তাদের প্রতি অবহেলা ও উপহাসেরই নামান্তর। কাজেই আমরা মালিক পক্ষকে বলব, আপনারা কালবিলম্ব না করে চা-শ্রমিকদের এই ন্যায্য দাবিটি মেনে নিন।
চা-বোর্ডের তথ্য অনুসারে দেশের ১৬৭ চা-বাগানে পাঁচ লাখের বেশি চা-জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক প্রায় এক লাখ। একজন শ্রমিকের মজুরির ওপর কমপক্ষে পাঁচজনের ভরণপোষণ নির্ভর করে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে ৩০০ টাকা মজুরি পেলেও তা সম্ভব নয়। তাছাড়া স্বল্পমজুরি ও সব ধরনের নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত থাকায় জীবনমানের সব সূচকেই পিছিয়ে রয়েছেন চা শ্রমিকরা। অভিযোগ রয়েছে, প্রতি বছর নতুন মজুরি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও বিগত ১৯ মাসেও নতুন মজুরি নির্ধারণ হয়নি চা শ্রমিকদের। সরকার ও বাগান কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাস দিয়ে এতদিন পার করেছে। তাই আমাদের সুস্পষ্ট দাবি-অবিলম্বে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে চা-শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি যাতে চা-বাগান মালিকরা মেনে নেন তা নিশ্চিত করতে হবে।