মানবিক কর্মকাণ্ডের তহবিল ক্রমশ কমে আসায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এখন অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউএনএইচসিআর-এর মুখপাত্র শাবিয়া মান্টু।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, মানবিক সহায়তা বিষয়ক একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি অপূর্ণ চাহিদার মধ্যে রয়েছে সঠিক পুষ্টি, আশ্রয়ের উপকরণ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, এবং জীবিকার সুযোগ। ভবিষ্যৎ জীবনের চিন্তায় কেউ কেউ নৌপথে বিপজ্জনক ভ্রমণেও যাচ্ছেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে দেশে। পাঁচ বছরে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আগে থেকেই বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের আর্থিক সহায়তা ও সংকট সমাধানে জোরদার প্রচেষ্টার জন্য আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
শাবিয়া বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সবার একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যেন রোহিঙ্গারা এই নিদারুণ জীবন চালিয়ে যেতে বাধ্য না হন। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে বিশ্বকে আরও জোরদারভাবে কাজ করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে ও টেকসইভাবে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি করা যায়।
তিনি আরও বলেন, এই মানবিক সংকটের শুরুতে বাংলাদেশের সরকার, স্থানীয় জনগণ ও মানবিক সংস্থাগুলো দ্রুত শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ায়। কক্সবাজারে তাদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করে, যেটি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির।
পাঁচ বছর পর অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী ইউএনএইচসিআরকে বলেছেন যে তারা নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের পরিস্থিতি তৈরি হলে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান। সেখানে তারা তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা, নিবন্ধন ও নাগরিকত্বের সুষ্ঠু পরিকল্পনা চান। পাশাপাশি দরকার হবে সেবা ও জীবিকা অর্জনের সুযোগ।
এখন প্রায় ১০ লাখ রাষ্ট্রবিহীন রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে রয়েছেন অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ অবস্থায়। তারা তাদের বেঁচে থাকার জন্য সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল বলে জানান শাবিয়া মান্টু।
দক্ষতার উন্নয়ন
ইউএনএইচসিআর-এর মুখপাত্র বলেন, রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, দক্ষতার উন্নয়ন ও জীবিকার সুযোগের জন্য সহায়তা জোরদার করতে হবে। কার্যক্রমগুলো শরণার্থীদের চূড়ান্ত প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত এবং তাদের বাংলাদেশে অবস্থানকালে নিরাপদ ও কর্মক্ষম থাকতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু ইতোমধ্যে মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমে শিক্ষাগ্রহণের জন্য নিবন্ধিত হয়েছে। তাদের মিয়ানমারের ভাষায় পড়ানো হচ্ছে।
সহায়তার আবেদন
ইউএনএইচসিআর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আরও সহায়তার আবেদন জানাচ্ছে। যাতে প্রাপ্তবয়স্ক ও কিশোর রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কারিগরি শিক্ষা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির মতো দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম থেকে উপকৃত হতে পারেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জীবনরক্ষাকারী উপকরণ ও সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু আর্থিক সহায়তা অপর্যাপ্ত।
২০২২ সালের মানবিক কার্যক্রম, যা রোহিঙ্গা শরণার্থী ও পাঁচ লাখেরও বেশি স্থানীয় জনগণ মিলিয়ে মোট ১৪ লাখ মানুষের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ওই পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজন ৮৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আজ পর্যন্ত এর মাত্র ৪৯ শতাংশের জোগান হয়েছে বলে জানান ওই মুখপাত্র।