বেসরকারি চাকুরে আনোয়ার সিদ্দিক মাস দেড়েক আগেও দেশের প্রতিষ্ঠিত একটি ব্রান্ডের গায়ে মাখা সাবান কিনেছেন ৩৫-৩৮ টাকায়। গতকাল তা কেনেন ৫০ টাকায়। একইভাবে একটি ছোট সাইজের টুথ পেস্ট তাকে কিনতে হয়েছে ৫০ শতাংশের বেশি দাম দিয়ে।
চাল-ডাল, তেল-সবজির বাজারের আলোচনা সামনে থাকলেও এর বাইরে অন্যান্য প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম যে বেড়ে বসে আছে, তা কেবল কিনতে গিয়েই টের পাচ্ছেন ক্রেতারা।
মূলত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির আগেই অনেক নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে তা চড়চড় করে উঠে চলে যায় সাধারণের নাগালের বাইরে। বাজারের বিভিন্ন পণ্যের আগের দাম আর এখনকার দামের পার্থক্য করে দেখা গেছে, গত ৫ আগস্ট থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।
অতিরিক্ত ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ফলে ভোক্তাদের নির্ধারিত আয়ের বেশির ভাগ অংশই ব্যয় করতে হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনার পেছনে। কাটছাঁট করতে হচ্ছে নানা খাতে। টিকে থাকার লড়াই এখন শুধু নিম্ন আয়ের মানুষের নয়, মধ্যবিত্তেরও।
বাসাবো বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়েছেন কবীর মজিদ। বিরসমুখে তিনি জানান, ৬ জনের সংসারে আগে এক সপ্তাহের কেনাকাটার জন্য ৩ হাজার টাকার বাজার করলেও এখন সেই একই বাজার করতে হচ্ছে ৫ হাজার টাকায়।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জিরা শাইল চাল কেজিপ্রতি ৬০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, আটাশ চাল কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, উনত্রিশ চাল কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, মিনিকেট কেজিপ্রতি ৬৫ থেকে বেড়ে ৭৫ টাকা, মোজাম্মেল মিনিকেট কেজিপ্রতি ৬৮ থেকে বেড়ে ৭৫ টাকা, রশিদ মিনিকেট চাল কেজিপ্রতি ৭০ থেকে বেড়ে ৮৫ টাকা, কাটারী আতপ চাল কেজিপ্রতি ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৯৫ টাকা, এসিআই চিনিগুঁড়া চাল কেজিপ্রতি ১০০ থেকে বেড়ে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা হয়েছে।
এঙ্কর ডাল কেজিপ্রতি ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, মুগ ডাল কেজিপ্রতি ৯০ থেকে বেড়ে ৯৫ টাকা, মসুর (বোলডার) কেজিপ্রতি ১০৫ থেকে বেড়ে ১১৫ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১২৫ থেকে বেড়ে ১৩৫ টাকা, আদা ১২৫ থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৪৫ থেকে বেড়ে ৬৫ টাকা, রসুন ১৪০ থেকে বেড়ে ১৬০ টাকা হয়েছে।
পাম ওয়েল কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে বেড়ে ১৬০ টাকা, সুপার সয়াবিন তেল খোলা ১৫৫ থেকে বেড়ে ১৬৫ টাকা, সয়াবিন তেল খোলা ১৮৫ থেকে বেড়ে ১৯২ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল কেজিপ্রতি ১৮৫ থেকে বেড়ে ১৯২ টাকা হয়েছে। এছাড়া সরিষার তেল কেজিপ্রতি ২৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৩২০ টাকা হয়েছে। অন্যদিকে ফ্রেশ চিনি কেজিপ্রতি ৮৫ থেকে বেড়ে ৯৫ টাকা, পুষ্টি সুজি কেজিপ্রতি ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮ টাকা, খোলা আটা কেজিপ্রতি ৪২ থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, তীর আটা ২ কেজি প্যাকেট ১০২ টাকা থেকে বেড়ে ১১৫ টাকা, ময়দা ২ কেজি প্যাকেট ১৩৫ থেকে বেড়ে ১৪৮ টাকা, ডানো পুষ্টি দুধ কেজি প্রতি ৩০০ থেকে বেড়ে ৩৪০ টাকা, প্রাণ সুপার মিল্ক কেজিপ্রতি ৪৮০ থেকে বেড়ে ৫৫০ টাকা, ডিপ্লোমা দুধ কেজিপ্রতি ৭০০ থেকে বেড়ে ৭৯০ টাকা হয়েছে।
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে ১২৫ গ্রামের ডেটল সাবান ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা, সেভলন সাবান ৫৫ থেকে বেড়ে ৬৫ টাকা, ডাব সাবান ১২৫ থেকে বেড়ে ১৩৫ টাকা, লাক্স সাবান ৫৫ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, কসকো সাবান ৩০ থেকে বেড়ে ৪৫ টাকা, তিব্বত সাবান ৩৮ থেকে বেড়ে ৪২ টাকা, ১২৫ গ্রাম হুইল সাবান ২০ থেকে বেড়ে ৩০ টাকা, রিন পাউডার কেজিপ্রতি ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা, পেপসোডেন্ট ১০০ গ্রাম ৮৫ থেকে বেড়ে ৯০ টাকা, ক্লোজআপ ১০০ গ্রাম ৮৫ থেকে বেড়ে ৯৫ টাকা, গ্লো অ্যান্ড লাভলি ১২৫ থেকে বেড়ে ১৩৫ টাকা, গ্লো অ্যান্ড লাভলি ফেস ওয়াশ ১৫০ থেকে বেড়ে ১৬০ টাকা করা হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমে যাওয়ায় বেড়ে গেছে আমদানি ব্যয়, যার প্রভাবেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সেক্ষেত্রে ভোক্তাকে কম কিনে কম খাওয়া ছাড়া বিকল্প পথ নেই। একই সঙ্গে মানুষের আয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি জোর দেন ক্যাব সভাপতি।
ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘রাজধানীর সবগুলো বাজারে ধারাবাহিকভাবে আমাদের টিম অভিযান চালাচ্ছে। বরাবরের মতো আমার একটাই কথা অসাধু ব্যবসায়ীরা যারা বেশি মুনাফা লাভের জন্য বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে, তাদের আমরা যথার্থভাবে চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণ করার।’