নিজ দেশে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গারা বিষফোড়া হয়ে ওঠেছে। কক্সবাজারে ইয়াবা, মানব পাচার ও হাটবাজার নিয়ন্ত্রণসহ ১৪ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। ক্যাম্পের অভ্যন্তরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে একাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাড়ছে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা। চলছে অস্ত্রের মহড়া, ঘটছে একের পর এক হত্যাকাণ্ড।
গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহসহ শতাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে বিভিন্ন সংস্থা ও বেসরকারি তথ্যমতে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১২০টিরও বেশি। গত দুই মাসেই দুই রোহিঙ্গা নেতাসহ ১০টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সামনের দিনে আরও হত্যাকাণ্ড ও ক্যাম্পে বিভিন্ন ধরনের নাশকতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রত্যাবাসন ছাড়া রোহিঙ্গাদের অপরাধী কার্যক্রম থেকে মুক্তির উপায় নেই। তবে পরিকল্পিত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হলে রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা কমানো সম্ভব। গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক করেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগামীতে আরও বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে। সাম্প্রতিক প্রায় সব হত্যাকাণ্ডে আলোচিত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন গ্রুপের হাত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারা।
এদিকে রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর উপলক্ষ্যে ক্যাম্পে পৃথকভাবে সমাবেশ করার উদ্যোগ নিয়েছেন রোহিঙ্গারা। ২০১৭ সালের গণহত্যার বিচার দাবি ও পূর্ণ নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনসহ নানা দাবিতে এ সমাবেশ ও মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
আজ উখিয়ার অন্তত ছয় থেকে ৯টি ক্যাম্পে পৃথকভাবে এই মানববন্ধন ও সমাবেশ হবে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি আনুষ্ঠানিক কোনো সমাবেশ নয়। শুধু নিজ নিজ ক্যাম্পে মানববন্ধন করার সুযোগ পাবেন রোহিঙ্গারা।
ক্যাম্পে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ১৬ এপিবিএন-এর অধিনায়ক এডিআইজি হাসান বারী নুর বলেন, রোহিঙ্গারা দিনটি স্মরণে মানববন্ধনের আয়োজন করছে। এটি বড় কোনো সমাবেশ বা মহাসমাবেশ নয়। সমাবেশের কোনো অনুমতিও নাই।
রোহিঙ্গা নেতাদের তথ্যমতে, মূলত রোহিঙ্গাদের জনপ্রিয় নেতা মুহিব্বুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের আস্থা হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে কথিত রোহিঙ্গা সংগঠন আরকান সালভেশন আর্মি (আরসা)। এ সুযোগে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং নগদ টাকা দিয়ে নিজ দলের পরিধি ও আধিপত্য বাড়ানোর চেষ্টা করছে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। যাদের ক্ষমতা বেশি তারাই সিংহভাগ ক্যাম্পে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে। এটা করতে গিয়ে যারা সেই গ্রুপের কথার বাইরে যায়, তাদেরকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়। যারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাদের সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সেদেশের সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সরাসরি যোগাযোগ হয়। চলমান সময়ে সন্ত্রাসী নবী হোসেনের সঙ্গেই মিয়ানমার সরকারের যোগাযোগ বেশি। মাস দুয়েক আগে বিজিবি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেনকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
গোয়েন্দা তথ্যমতে, আলোচিত মাস্টার মুন্না গ্রুপ, ডাকাত হাকিম গ্রুপ, জাবু গ্রুপ, ইসলাম গ্রুপসহ অন্তত দুই ডজনের অধিক ছোটবড় সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে। ইয়াবাসহ সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি নবী হোসেন সব গ্রুপকে নিয়ে জোট বেঁধেছে। এখন সব গ্রুপ নবী হোসেনের নির্দেশনায় কাজ করছে। তাদের হাতে বিপুলসংখ্যক দেশি-বিদেশি অস্ত্রের মজুতও রয়েছে।