‘হাওয়া’র বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তিসহ পাঁচ দাবি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের

বিনোদন ডেস্ক

‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার, ‘শনিবার বিকেল’ চলচ্চিত্রের মুক্তিসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীরা।

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।

universel cardiac hospital

‘হাওয়া’ ও ‘শনিবার বিকেল’ চলচ্চিত্র নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে ‘বাংলা চলচ্চিত্র বা কনটেন্টে সেন্সরশিপের খড়গ: গল্প বলার স্বাধীনতা চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন চলচ্চিত্র পরিচালক পিপলু আর খান। দাবি মানা না হলে পরে কর্মসূচি দেওয়ারও ঘোষণা করা হয়।

পাঁচ দফা দাবি হলো

১. ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

২. ‘শনিবার বিকেল’ চলচ্চিত্র মুক্তি দিতে হবে এবং কেন সেন্সর ছাড়পত্র দিতে দেরি করা হচ্ছে, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।

৩. বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড বাতিল করতে হবে এবং প্রস্তাবিত চলচ্চিত্র সার্টিফিকেট আইনের ক্ষেত্রে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চলচ্চিত্র সার্টিফিকেট আইন প্রণয়ন করতে হবে।

৪. প্রস্তাবিত ওটিটি নীতিমালার ক্ষেত্রে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ওটিটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

৫. চলচ্চিত্র বা কনটেন্ট বিষয়ক কোনও মামলা দায়ের করার আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র পরিচালক নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, বাংলা চলচ্চিত্র বিকাশের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক একটা পরিবর্তন ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ে। এমন সময় ‘হাওয়া’র বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা হলো। ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি পাচ্ছে না দুই বছর ধরে। তরুণরা নতুন সহস্রাব্দের চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে।

শিল্পের বাস্তবতা থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিল্পের ভাষা যেটা-সেটা থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা থাকতে হবে শিল্পীর। সংবিধানেও মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।

দাবি আদায়ে প্রাথমিক কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলন থেকে। জানানো হয়, আগামী সেপ্টেম্বরে একটি গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলোতে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্রের কাহিনি রচয়িতা এবং চিত্রনাট্যকার গাউসুল আলম শাওন বলেন, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের এখনই সময়। আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে। ভাষা কিংবা সংস্কৃতি একটি চলমান বিষয়। কোনও প্রতিক্রিয়াশীল আইন দিয়ে এটাকে আটকে রাখতে গেলে তা জাতির জন্য ভয়ংকর হতে পারে। চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধানে দেওয়া হয়েছে। কিছু মানুষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অসাংবিধানিক উপায়ে হরণ করা যাবে না।

হাওয়া চলচ্চিত্র নিয়ে করা মামলা প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাস্তব দুনিয়ায় সংঘটিত কোনও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যে আইন বলবৎ হয়, তার যদি ফিকশনাল রিয়ালিটি তথা তৈরি করা বাস্তবতার ওপর প্রয়োগ করা হয়—তাহলে শিল্প-সাহিত্য-সংগীত-চলচ্চিত্র কিছুই করা সম্ভব না। হাওয়া চলচ্চিত্রে যে শালিক পাখি দেখানো হয়েছে, তা একটি তৈরি করা বাস্তবতার অংশ। সে ক্ষেত্রে বাস্তব দুনিয়ার জন্য প্রণীত আইন দিয়ে আমরা কীভাবে ফিকশনাল রিয়ালিটিকে বিচার করবো?

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, হাওয়া চলচ্চিত্রে যে জনগোষ্ঠীর জীবন দেখানো হয়েছে তা বাস্তব উপস্থাপনার জন্য তাদের সহজাত ভাষাভঙ্গির রীতিকে তুলে ধরা হয়েছে। এতে চলচ্চিত্রের সংলাপে যতটুকু স্ল্যাং বা গালি উঠে এসেছে তা চলচ্চিত্রায়ণের প্রয়োজনেই। এ কারণে দৃশ্যায়িত হয়েছে হত্যা ও মৃত্যুর দৃশ্যগুলো। এসব দৃশ্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বাস্তব দুনিয়ার জন্য প্রণীত আইন দিয়ে কি এই ফিকশনাল রিয়ালিটিকে আমরা বিচার করতে পারবো?

সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, মোরশেদুল ইসলাম, তারিক আনাম খান, শম্পা রেজা, আফসানা মিমি, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, কামার আহমাদ সাইমন, মেজবাউর রহমান সুমন, জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী প্রমুখ।

শেয়ার করুন