১৯ দিনে চা পাতার অতিরিক্ত ঝলকানিতে হন্ত-দন্ত অবস্থায় পড়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন লাখ লাখ কেজি চা পাতা চয়ন হচ্ছে। রেকর্ড পরিমাণ এ পাতা রাখার স্থান সংকুলান হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ। বিরতিহীনভাবে ফ্যাক্টরি চললেও চা পাতা উৎপাদনে স্মরণকালের প্রচুর কাঁচামাল কাঁচাপাতা সংগ্রহে হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সকালে বাগান ঘুরতে গিয়ে এমনটাই দেখা যায় বিভিন্ন চা-বাগানে। কাঁচাপাতা রাখার ট্রাপ হাউজ ভরপুর হয়ে আছে। তাই কোনো কোনো বাগান কর্তৃপক্ষ ভিন্ন স্থানে নিয়ে পাতা রাখছে।
চা-শ্রমিকরা বলছেন, জীবনে এত পাতা উত্তোলন করিনি। সর্বোচ্চ ৫০ কেজি উত্তোলন ছিল রেকর্ড। কিন্তু গত ২ দিনে প্রতিজনে আমরা ১০৬-১১০ কেজি পর্যন্ত পাতা উত্তোলন করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছি। নারী ও পুরুষ শ্রমিক পাতা তোলার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। পাতা নষ্ট হওয়ার আশংকায় সকাল বিকেল চলছে বাগানে বাগানে পাতা চয়ন। এতদিনের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের লোকসান পোষাতে এখন তৎপর শ্রমিকরা।
বাগান ব্যবস্থাপকরা বলছেন, আমরা এত বেশি চা পাতা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। ২৪ ঘণ্টা ফ্যাক্টরি চালাচ্ছি। পাতা রাখার স্থান দিতে পারছি না। চা পাতা উৎপাদনের গুণগতমান রক্ষা করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার রাজনগর চা বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, কাঁচাপাতা রাখার ট্রাপ হাউজ ভরপুর। তাই পাতা রাখা হয়েছে ম্যানেজার বাংলো ও কোম্পানি বাংলোর বারান্দায়। এছাড়াও পাতা রাখা হয়েছে সহকারী ম্যানেজারদের বাসার ফ্লোরে এবং মন্দির ঘরের পাশের বৈঠকখানার মেঝেতে।
রাজনগর চা বাগানের হালকা পাতলা গড়নের নারী চা শ্রমিক মিনা অলমিক (৪০) বলেন, আমার জীবনে এত চা-পাতা ওঠাতে পারিনি। একদিনে ৮০ কেজি পাতা তুলেছি।
জেলার করিমপুর চা বাগানের পুরুষ চা শ্রমিক গোপাল গোয়ালা (৪৫) বলেন, এক বেলাতেই ১১০ কেজি চা-পাতা তুলতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
মাথিউরা চা-বাগানের নারী চা শ্রমিক ময়না রাজভর (৪০) বলেন, আমি আমার জীবনে এই প্রথম ১০০ কেজি পাতা তুলেছি। যা নিজের কাছে অবাক লেগেছে।
চা শ্রমিক নেতা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দীপংকর ঘোষ বলেন, ১৯ দিন বাগান বন্ধ থাকায় চা গাছের পাতার কুঁড়ি অনেক লম্বা হয়েছে। তাই শ্রমিকরা বেশি বেশি করে পাতা তুলছে। বাগানে পাতা রাখার মতো স্থান দেওয়া যাচ্ছে না। পাতা প্রক্রিয়াজাত ও লোডশেডিংয়ের কারণে নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে।
কথা হয় রাজনগর চা বাগানের সিনিয়র সহকারী ম্যানেজার আনিসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সাধারণত ২ থেকে ৪ ইঞ্চি লম্বা পাতা তোলা হয়। ১৯ দিন বন্ধ থাকার কারণে চা গাছের পাতা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত পাতা তোলা হচ্ছে। যে কারণে অনেক বেশি পাতা উঠছে। এত পাতা একসঙ্গে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। আবার চা গাছ ক্লোনিং (ছাঁটাই) করতে হবে। না হলে গাছ থেকে পাতা বের হবে না। তবে মৌসুম রক্ষার জন্য পাতা তোলা বন্ধ করা যাচ্ছে না। আমার বাগানে ২ দিনে ২ লাখ কেজি পাতা সংগ্রহ করা হয়েছে। যা নিয়ে আমরা রাত দিন পরিশ্রম করছি। পাতা রাখার স্থান দিতে পারছি না। বাগানের যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছি সেখানে পাতা রাখছি। সব মিলিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছি।
জেলার মাথিউরা চা বাগানের প্রধান ম্যানেজার মো. সিরাজদৌলা বলেন, কাঁচাপাতা নিয়ে হন্ত-দন্ত অবস্থায় পড়েছি। আমার বাগানে ফ্যাক্টরি না থাকায় কোম্পানির অন্য বাগানে পাতা পাঠাতে হচ্ছে। এতে পাতার গুণগত মান রক্ষা করা কঠিন। রের্কড পরিমাণ পাতা উত্তোলনের কারণে ট্রাপ হাউজে পাতা রাখার জায়গা নেই। এ নিয়ে আমরা বড় বিপদে আছি। আবার চা গাছ প্রক্রিয়াজাত করার জন্য পাতা তোলা বন্ধ করা যাচ্ছে না।