আলতু-ফালতু লোক ঢুকিয়ে দলের বদনাম করবে না, ছাত্রলীগকে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছাত্রলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্রুপ বাড়ানোর জন্য আলতু-ফালতু লোক ঢোকানো যাবে না। তাতে নিজেদের বদনাম, দলের বদনাম, দেশের বদনাম। আজ বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগ জাতির পিতার হাতে গড়া। আমি জানি, ছাত্রলীগ সম্পর্কে অনেক অনেক কথা লেখা হয়। এতো বড় একটা সংগঠন, তার মধ্যে কিছু কিছু তো… আমরা ক্ষমতায় আছি বলে অনেকেই ভেতরে ঢুকে যায়, ঢুকে নিজেরাই গোলমাল করে, বদনামটা ছাত্রলীগের ওপরে পড়ে।

universel cardiac hospital

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগে সংগঠন করার সময় গ্রুপ বাড়ানোর জন্য আলাতু-ফালতু লোক দলে ঢুকাবে না। তাতে নিজেদের বদনাম, দলের বদনাম, দেশের বদনাম। কারণ আমাদের পেছনে তো লোক লেগেই আছে। লেগেই থাকবে। ছাত্রদল যত অপকর্ম করে গেছে, সেটা নিয়ে কথা নেই। কিন্তু ছাত্রলীগের একটু হলে বড় নিউজ। এটা নিজেদের ঠিক থাকতে হবে।

আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তোলায় প্রকৃত দেশপ্রেমিক, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ, স্বাধীনতার আদর্শে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গড়ে উঠতে হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। যেন সঠিক নেতৃত্ব দেওয়া যায়। ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা, এগুলো কাজে লাগে না। করোনার সময় অনেক ধনী মানুষের টাকার পাহাড়ও কিন্তু কাজে লাগে নাই, এটা মাথায় রাখতে হবে। এটাই বাস্তবতা, এটাই সত্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে, ত্যাগ শিকার করে এগোতে পারলে সঠিক নেতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা যায়। গড্ডলিকাপ্রবাহের মতো অর্থ-সম্পদের পেছনে ছুটলে অর্থ-সম্পদে ভেসে যেতে হয়। এতে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতাও থাকে না। দেশকেও কিছু দেওয়া যায় না, মানুষকেও দেওয়া যায় না।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পড়াশোনা করার জন্য নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতার লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লে অনেক কিছু জানা যাবে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সিক্রেট ডকুমেন্ট সবাইকে পড়ার অনুরোধ করছি। যেটা পড়লে অনেক শেখার আছে, জানার আছে। রাজনীতি কররার অনেক জ্ঞান অর্জন করা যাবে।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল থেকে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হবে। সারা বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বলব, যার যার এলাকা খুঁজে দেখতে হবে। একটি মানুষও যদি গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকে, সঙ্গে সঙ্গে সেটা আমার কাছে খবর দিতে হবে বা তার জন্য আমরা ঘর তৈরি করে দেব। জাতির পিতার বাংলাদেশে কোনো মানুষ, গৃহহীন এবং ভূমিহীন থাকবে না।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাশ্রয়ী হওয়ার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপীয় অর্থনীতির অবস্থা ভয়াবহ। আমরা আগে থেকেই যদি সাবধান হতে পারি, তাহলে সামাল দিতে পারব। প্রত্যেকে নিজের ঘরে, হলে, ক্লাস থেকে বের হওয়ার সময় সুইচগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। এইভাবে আমাদের বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানির সাশ্রয় করতে হবে। অহেতুক ঘোরাঘুরি করার দরকার নেই। পায়ে হাঁটলে স্বাস্থ্য ভালো হয়, শরীরচর্চাও হয়।

করোনার সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জরাজীর্ণ ভবন মেরামত করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। আর প্রত্যেকে যার যার গ্রামের বাড়ি এবং যেখানে বসবাস করবে, হল কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হোক, তাতে ব্যাপকভাবে গাছ লাগানো, চাষ করা এবং উৎপাদন বাড়াও। কারণ বিশ্বে কিন্তু আরও ভয়াবহ অবস্থা হবে। পয়সা দিয়েও খাবার পাওয়া যাবে না। সেই ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের খাবার নিজেদের উৎপাদন করতে হবে। ছাত্রলীগ যেমন ধান কাটায় সাহায্য করেছে, দরকার হলে ধান রোপণেও সাহায্য করতে হবে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

শেয়ার করুন