বৈশ্বিক জলবায়ুর আরও একটি অস্বাভাবিক ঘটনা সামনে আসছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর বিরাজমান ‘লা নিনা’ পা রাখছে তৃতীয় বছরে। লা নিনা হলো একটি জলবায়ু প্যাটার্ন যাতে শীতল সমুদ্র স্রোতের প্রভাব দেখা যায়।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুসারে, ১৯৫০ সালের পর থেকে লা নিনার প্রভাবের স্থায়ীত্ব একবারে দু’বছরের বেশি হয়েছে মাত্র ছয় বার।
মধ্য ও নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঠান্ডা হওয়াকে মূলত লা নিনা বলা হয়ে তাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, লা নিনা ভারতীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাতের জন্য সহায়ক। তবে লা নিনার বিপজ্জনক দিকটি হলো- এটি আটলান্টিক মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্যও দায়ী।
৩০ আগস্ট পর্যন্ত এ বছর ভারতে ৭৪০ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে; যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। ভারতের ৩৬টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে ৩০টিতে স্বাভাবিক বা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে।
লা নিনার বিপরীত অবস্থা হলো এল নিনো। এতে উষ্ণ সামুদ্রিক জলস্রোতের প্রভাব দেখা যায়।
আগস্টের মাঝামাঝি অস্ট্রেলিয়ার ব্যুরো অব মেটিওরোলজি (বিওএম), যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) এবং ভারতের মনসুন মিশন ক্লাইমেট ফোরকাস্ট সিস্টেমের (এমএমসিএফএস) আবহাওয়াবিদরা নিশ্চিত করেছেন যে, ২০২২ সালের শেষ নাগাদ লা নিনা থাকছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে এই সংস্থাগুলোই পূর্বাভাস করেছিল যে, আগস্টের মধ্যে এই লা নিনা পরিস্থিতির সমাপ্তি ঘটবে।
ভারতের মিনিস্ট্রি অব আর্থ সায়েন্সের একজন প্রাক্তন সচিব বলছেন, চলমান এই লা নিনা অস্বাভাবিক তবে ভারতীয় বর্ষার জন্য এটি ভালো লক্ষণ। তবে ভারতের জন্য ভালো হলেও এ লা নিনা অন্য অনেক দেশের জন্য ভালো নয়।
পুনেভিত্তিক ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজির (আইআইটিএম) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথিউ কোলও মনে করেছেন যে, গত তিন মাসে ভারতে যে ভালো বৃষ্টিপাত হয়েছে লা নিনা তার একটি কারণ হতে পারে।
তবে একইসঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে লা নিনার বিপজ্জনক দিকটি হলো- এটি আটলান্টিক মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্যও দায়ী। রক্সি ম্যাথিউ বলছেন, লা নিনার কারণে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরির হার বাড়তে পারে।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস