টানা মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের মানুষের যখন নাভিশ্বাস ওঠেছে, তখন কিছুসংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজি করে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দিয়ে বাজার আরও অস্থির করে তুলছে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, স্থানীয় বাজারে গত এক মাসে চাল, ডালসহ অন্তত আটটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ঘিরে বড় ধরনের মূল্য কারসাজি হয়েছে। এসব পণ্যের দাম বিশ্ববাজারে যে হারে বেড়েছে, এর চেয়েও বেশি বাড়ানো হয়েছে স্থানীয় বাজারে। একাধিক পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়েনি, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মূল্য বাড়ানো হয়েছে!
বর্তমানে দেশে চালের মজুত সন্তোষজনক পর্যায়ে থাকলেও চালের বাজারে অস্থিরতা কমছে না। অস্থির আটা-ময়দার বাজারও। সম্প্রতি ডিমের বাজারে চরম অস্থিরতা লক্ষ করা গেছে। গরিব মানুষ তাদের আয়ের সিংহভাগ খরচ করে ভোগ্যপণ্য ক্রয়ে। চাল-আটা-ময়দা-ভোজ্যতেলের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোগ্যপণ্য ক্রয় করার পর গরিব মানুষের হাত খালি হয়ে যাচ্ছে। অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে বর্তমানে স্বল্প আয়ের মানুষ প্রয়োজনীয় পণ্য না কিনেই বাড়ি ফিরছেন।এভাবে আর কতদিন?
প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে অনেক ভুঁইফোঁড় সমিতি ও অ্যাসোসিয়েশন গজিয়ে ওঠেছে। অনেক পণ্যের মূল্য এসব সংগঠন নির্ধারণ করে এবং তাদের কর্মকাণ্ডের কারণেও পণ্যের মূল্য বাড়ছে। বলা যায়, অনেক ধরনের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে হাতেগোনা কিছু ব্যবসায়ী। আর অসাধু ব্যবসায়ী ও তাদের সিন্ডিকেটের প্রভাবেই বর্তমানে নিত্যপণ্যের বাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। এসব সিন্ডিকেট শনাক্ত করে তা ভেঙে দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অনুসন্ধানেও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) মার্কিন ডলারের বিনিময় হারে অস্থিরতা, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব এবং বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি- এসব তথ্য পর্যালোচনা করেছে। পর্যালোচনায় স্পষ্ট হয়েছে যে, এই তিন সূচকের প্রভাবে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যতটা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা, তার চেয়ে অনেক বেশি বাড়ানো হয়েছে। আর এভাবে মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী। অবশ্য অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির প্রেক্ষাপটে কয়েকটি পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্ত অবশ্যই ইতিবাচক। তবে সবধরনের বাধা উপেক্ষা করে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভোক্তাদের ঠকিয়ে কেউ যাতে পার পেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।