নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলায় বিএনপির প্রায় ৬ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি মামলায় পাঁচ হাজার এবং অন্য মামলায় ৭১ জনের নাম উল্লেখসহ ৮০০ থেকে ৯০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত শাওন প্রধানের বড় ভাই মিলন হোসেন বাদী হয়ে ওই রাতেই একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা বিএনপির পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. আমীর খসরু বলেন, শাওনের বড় ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। মামলায় কাউকে দায়ী করা হয়নি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, নিহত শাওনের ভাই মিলন হোসেন উল্লেখ করেন শহরের দুই নং রেলগেইট এলাকায় রাস্তায় পার হওয়ার সময়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা পুলিশের উপর ইটপাটকেল ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণের সময়ে তার ভাই শাওন মাথায় ও বুকে গুরুত্বর জখম হয়। এরপর তাকে রাস্তার লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে এ বিষয়ে মামলার বাদী মিলনের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, মামলা হয়েছে। তবে এর বেশি কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্য হামলা করার অভিযোগ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু বলেন, পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে এনে সদর মডেল থানায় একটি মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ৭১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত পরিচয় আরও আটশ থেকে নয়শ জনকে আসামি করা হয়। তবে তিনি তদন্তের স্বার্থে এজাহারনামীয় কোন আসামির নাম প্রকাশ করেননি।
এরমধ্যে এ মামলায় ১০ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে বিকেলে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আগামী রোববার তাদের বিরুদ্ধে রিমান্ড শুনানি হবে।
আসামিরা হলেন- মো. আব্দুস সাত্তার (২২), মো. মজিবুর রহমান (৫২), রঞ্জন কুমার দেবনাথ (৩৬), রাজিব (৩৮), মো. জনি (৩৮), বাদল (৩৩), মো. আবুল কালাম ভূইয়া (৪৮), রিমন (২২), ইমন (১৮) ও সোহান (১৫)।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর থানার দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেফতার করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আগামী রোববার আসামীদের বিরুদ্ধে শুনানি হবে।
গত ১ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় নারায়ণঞ্জ শহরের ২ নম্বর রেলগেইট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। আর সময়ে মুহুর্মুহু টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও গুলি বর্ষণের আওয়াজে পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করে। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। ভাঙচুর করা হয় পুলিশ বক্স।
এ ঘটনায় পুলিশের ১৫ জন ও বিএনপির প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। নিহত হয় শাওন নামে একজন। শাওনকে প্রথম থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীরা যুবদলের কর্মী হিসেবে দাবি করে আসছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শাওনকে যুবদলের কর্মী হিসেবে অস্বীকার করছেন। একই সঙ্গে তারা শাওনকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ভাতিজা হিসেবেও দাবি করছেন।
এ নিয়ে শাওনের বাড়ি ফতুল্লার নবীনগর এলাকায় উত্তেজনাকার পরিস্থিতি হয়। শাওনকে যুবদল নয় যুবলীগ কর্মী দাবী করে তার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে তারা সেখানে রাতভর অবস্থান নেন। এসময় বিএনপির নেতাকর্মীরা আসতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। তবে শুক্রবার দুপুরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শাওনের বাড়িতে এসেছিলেন এবং তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) নিহতের বড় ভাই মিলন প্রধান এবং মামা মোতাহার হোসেনের কাছে শাওনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বাড়িতে আনা হয় শাওনের মরদেহ। রাত দেড়টায় পুলিশের প্রহরায় ফতুল্লার নবীনগর শাহওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজার নামাজ শেষে নবীনগর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।