দেশে যে পরিমাণ রপ্তানি আয় আসছে তার চেয়ে বেশি খরচ করতে হচ্ছে আমদানিতে। ফলে চলতি অর্থবছরের শুরুতেই বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে চলতি হিসাব ও সামগ্রিক লেনেদেনেও ঘাটতিতে পড়েছে দেশ।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। জুলাইয়ে ৫৮৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৩৮৮ কোটি ডলারের পণ্য। ফলে ১৯৮ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ৯৫ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ১৮ হাজার ৮১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬২ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি।
আলোচিত সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। জুলাই মাসে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৭৩ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবা খাতে দেশের ব্যয় হয়েছে ১০১ কোটি ডলার। সেবা খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৭৫ লাখ ডলার।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি, বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হওয়া এবং আশানুরূপ রেমিট্যান্স প্রবাহ না থাকায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ।
২০২১-২২ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) দেশে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৩২৫ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় তিন লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি; যা ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ। একই সময় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতিও সাড়ে ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলার।
চলতি হিসাবে ভারসাম্য (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স)
চলতি হিসাবে ভারসাম্যে ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে এই ঘাটতির (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ কোটি ১০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ২৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু দেশে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স এখন ঋণাত্মক হয়েছে।
সামগ্রিক লেনেদেনে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮০ কোটি ডলার। এই সূচক আগের বছরের একই সময়ে ৩২ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে ২০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন ১৮৭ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ শতাংশ। অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় ছিল এই সূচক।
এফডিআই বেড়েছে ৩০ শতাংশ
দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাইয়ে ৩০ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৩৯ কোটি ডলারে উঠেছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে ৪৫ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়ে ১৮ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার।