‘রুশ বিশ্ব’ গড়তে নতুন ‘পররাষ্ট্রনীতি’ রাশিয়ার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না রাশিয়ার। এ পরিস্থিতিতে গত সোমবার (৫ আগস্ট) নতুন পররাষ্ট্রনীতির অনুমোদন দিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর পররাষ্ট্রনীতিতে চীন ও ভারতকে কাছে টানার পাশাপাশি স্লাভিক দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গেও রাশিয়ার সম্পর্ক জোরদারের কথা বলা হয়েছে পুতিনের নীতিতে। খবর রয়টার্সের।

universel cardiac hospital

অনেকে বলছেন, পুতিন পশ্চিমা বিশ্বের বদলে নতুন এক ‘রুশ বিশ্ব’ গড়তে চান। পুতিনের নতুন পররাষ্ট্রনীতি সেই ধারণার ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে। এই রুশ বিশ্বের ধারণাটি মূলত রক্ষণশীল মতাদর্শীদের একটি ধারণা। এটি রুশভাষীদের সমর্থনে অন্য দেশের ওপর হস্তক্ষেপকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য রক্ষণশীলেরা ব্যবহার করে থাকেন। পররাষ্ট্রনীতিতে বলা হয়েছে, রুশ বিশ্বের ঐতিহ্য ও আদর্শ সুরক্ষার পাশাপাশি এর অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করবে রাশিয়া।

পুতিনের ৩১ পৃষ্ঠার পররাষ্ট্রনীতিকে ‘মানবিক নীতি’ হিসেবেও তুলে ধরা হয়েছে। ইউক্রেনে হামলার ছয় মাস পরে এসে এই পররাষ্ট্রনীতির অনুমোদন দিলেন তিনি। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনকে নাৎসিমুক্ত ও দেশটির রুশভাষী লোকজনকে রক্ষায় সেখানে হামলা চালানোর নির্দেশ দেন পুতিন।

নতুন পররাষ্ট্রনীতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়া স্লাভিক দেশগুলোর সঙ্গে যেমন সহযোগিতা বাড়াবে, তেমনি চীন–ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে তৎপর থাকবে। মধ্যপ্রাচ্য, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করা হবে। এ ছাড়া ২০০৮ সালে জর্জিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের পর মস্কোর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া আবখাজিয়া ও ওসেটিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা হবে। ইউক্রেনে দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করার কথা বলেছে মস্কো।

রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে মানবিক কৌশলের কথা বলা হলেও এতে মূলত রুশ রাজনীতি ও ধর্মীয় সরকারি নীতির ধারণাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কট্টরপন্থী বিষয় যুক্ত হয়েছে, যাতে ইউক্রেনের কিছু অংশে মস্কোর দখলকে বৈধতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিচ্ছিন্ন রুশপন্থী সত্তাগুলোর প্রতি সমর্থনের বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে।

রুশ পররাষ্ট্রনীতিতে আরও বলা হয়েছে, রুশ ফেডারেশন প্রবাসী রুশ নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় সমর্থন দেবে। তাঁদের স্বার্থরক্ষা ও রুশ সাংস্কৃতিক পরিচয় সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে তারা। প্রবাসী রুশ নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাশিয়াকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে তুলে ধরবে এবং এর ভাবমূর্তিকে শক্তিশালী করবে।

পুতিন দীর্ঘদিন ধরেই রাশিয়ার বাইরে থাকা আড়াই কোটি রুশভাষী মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি নিয়ে কথা বলে আসছেন। তাঁর দৃষ্টিতে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে এই লোকজন ভাগ্যবিড়ম্বনার শিকার। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের এই পতনকে ভূরাজনৈতিক বিপর্যয় বলে মন্তব্য করেন।

শেয়ার করুন