বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক বেশ কয়েক বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে; যদিও মাঝখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুব রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং বাংলাদেশের ৫০ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছিলেন। এ সময়ের মধ্যে সারা পৃথিবীতে করোনা মহামারির আঘাত ছাড়াও নানা ধরনের পরিবর্তন এসেছে। যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর যে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে সমগ্র বিশ্বে। আমাদের দেশেও এ নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে, যার মধ্যে জ্বালানি সংকট বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে ভারত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা না মেনে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে গেছে।
এমন এক সময় বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে; আশা করা যায়-এ বৈঠকে জ্বালানি খাত বিশেষ গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশ যদি ভারতের কাছ থেকে জ্বালানি আমদানি করে, সেক্ষেত্রে মূল্য পরিশোধের ধরন কী হবে-ডলার নাকি অন্য কোনো মুদ্রায়-এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আমরা জানতে পেরেছি, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হবে।
মানবিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। ভারত এ ব্যাপারে সব সময়ই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। আমরা আশা করি, ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থেকে আরও জোরালো ভূমিকা রাখবে। ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক ভালো; বাংলাদেশের সঙ্গেও মিয়ানমারের সম্পর্ক ভালো। এ প্রেক্ষাপটে ভারত যদি রোহিঙ্গা ইস্যুতে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের উদ্যোগ নেয়, তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের মর্যাদা আরও বাড়বে। সম্প্রতি যুদ্ধ চলাকালেও রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বৈঠকের বিষয়ে তুরস্ক মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুরস্কের মর্যাদা বেড়েছে। আমি মনে করি, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতেরও এমন একটি উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এ ইস্যুতে ভারত যদি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে, তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের মর্যাদা অনেক বৃদ্ধি পাবে। এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার স্বার্র্থে ভারত সরকারের উচিত মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকর ভূমিকা পালন করা। ভারতের অনেক নামিদামি কূটনীতিক আছেন, যারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। আশা করছি, সেসব কূটনীতিকও রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের তৎপরতা অব্যাহত রাখবেন।
বর্তমান বাস্তবতায় জ্বালানির মতো বিষয়ে একক কোনো দেশের ওপর বেশি নির্ভরশীল না হওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ অনেক সচেতন। আমরা আশা করি, ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাপান এখন যেমন ভূমিকা পালন করছে, ভারতও যদি এ ধরনের ভূমিকা পালন করে, বিশেষত জাতিসংঘে যদি বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন প্রদান করে, তাহলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকের পর ফলোআপ মিটিংগুলো যাতে সময়মতো অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়