রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ৩০ ভাগ ইভিএম অকেজো

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইভিএম
ফাইল ছবি

অব্যবস্থাপনা ও যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ে থাকা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ৩০ ভাগ এই মুহূর্তে অকেজো। অকেজো এসব ইভিএমের বেশিরভাগই হার্ডওয়্যার সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। এর অনেকগুলোর যন্ত্রাংশ হারিয়ে বা চুরি হয়ে গেছে। মাঠ পর্যায়ে থাকা ৯৩ হাজার ৪১০ সেট ইভিএমের মধ্যে কন্ট্রোল ইউনিট রয়েছে ৮০ হাজার ১৭০টির। বাকি ১৩ হাজার ২৪০টি কন্ট্রোল ইউনিটের খোঁজ নেই। ৭ হাজার ৩২৭টি কন্ট্রোল ইউনিটের ব্যাটারির হদিস নেই।

মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত ইসির এক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরে ইভিএম প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

universel cardiac hospital

কর্মশালায় জানানো হয়, যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে ইভিএম’র আয়ুষ্কাল কমে যাচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি নির্বাচনে ব্যবহারযোগ্য ইভিএম’র ঘাটতির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) ‘ইভিএম এর টেকসই ব্যবহার, সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কৌশল ও সক্ষমতা বৃদ্ধির সুপারিশ প্রণয়ন’ শীর্ষক রুদ্ধদ্বার এ কর্মশালার আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।

নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় চার জন কমিশনার বক্তব্য রাখেন। এতে ইসির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও অংশ নেন।

কর্মশালায় অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, নির্বাচন কমিশন নতুন ইভিএম কেনার যে প্রকল্প নিচ্ছে সেখানে এসব মেশিন নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণের জনবল নিয়োগ, সংরক্ষণের জন্য শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ওয়ারহাউজ নির্মাণ ও পরিবহনের জন্য উপযোগী গাড়ি কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কর্মশালায় জানানো হয়, নির্বাচন কমিশনের কেনা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে ৯৩ হাজার ইভিএম মাঠ পর্যায়ে রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ৪৭ হাজার ৫০০টি প্লাস্টিক হার্ডবোর্ডে ও বাকি ৪৫ হাজার ৫০০টি কাগজের বাক্সে রয়েছে। এছাড়া গাজীপুরে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে ৫৪ হাজার ৫০০টি ও নির্বাচন ভবনের বেইজমেন্টে ২ হাজার ৫০০টি ইভিএম রাখা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যালয়ে ক্ষুদ্র পরিসরের স্টোরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বেশ কিছু ইভিএম সেট বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মজুত করা হয়েছে। এসব মেশিন সুষ্ঠু ও মানসম্মত ও যথাযথ নিরাপত্তার সঙ্গে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে অকেজো হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উল্লেখ্য, দেড় লাখ ইভিএম কিনতে একনেকে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এ প্রকল্প পাস হয়। প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার ৫১৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে দেড় হাজার ইভিএম কেনা হয়। এছাড়া ৭৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় আসবাবপত্রসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার চুক্তি করা হয়। ওইসব মেশিন সংরক্ষণ নিয়ে এখন জটিলতায় পড়েছে ইসি সচিবালয়। এ অবস্থায় আরও দুই লাখ ইভিএম কিনতে নতুন প্রকল্প নিচ্ছে ইসি। জানা গেছে, নতুন প্রকল্প নেওয়ার সমীক্ষা হিসেবে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় জানানো হয়- এ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ৮৫৯টি জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করেছে। চলতি ২০২২ সালে ইভিএমে ৪৭২টিতে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে।

কর্মশালায় উল্লেখ করা হয়- ইভিএমে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় এটি হ্যাক করা সম্ভব না। বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন ও ভোটার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক বিধায় ভোটকেন্দ্র দখল করে ভোট দেওয়া সম্ভব না।

ইভিএমে দুই ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে জানান ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান। সেগুলো হচ্ছে- ১. ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত ও ২. নির্বাচনে ব্যবহার সংক্রান্ত।

ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত সমস্যা তুলে ধরতে গিয়ে বেশ কিছু স্থির ছবি দেখান তিনি। যেখানে অগোছালো ও অযত্নে মেশিন রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে ইভিএমের আয়ুষ্কাল কমে যাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য মেশিন ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা যন্ত্রাংশ হারিয়ে গিয়েছে। ৩০ শতাংশ ইভিএম এই মুহূর্তে ব্যবহারের অনুপযোগী। ইভিএম সংরক্ষণ সংক্রান্ত তথ্যে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।

ইভিএম পরিচালনায় প্রশিক্ষিত জনবলের সংকট রয়েছে বলে কর্মশালায় উঠে আসে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সংক্রান্ত সমস্যা তুলে ধরে কর্মশালায় কর্নেল রাকিবুল হাসান বলেন, যথাযথ কোয়ালিটি কন্ট্রোল ছাড়া ইভিএম ভোটকেন্দ্রে পাঠানো হয়। এ মেশিন অপারেশন সংশ্লিষ্ট জনবলের দুর্বলতা ও ভীতি রয়েছে।

ইসি সচিবালয় জানায়, বিদ্যমান ইভিএম সংরক্ষণে ৩০টি জেলায় গোডাউন ও বাসা ভাড়া করা হয়েছে। ওইসব স্থানে ইভিএম স্থানান্তর ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাকি জেলাগুলোতে ভাড়ার করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

জানা গেছে, কর্মশালায় নির্বাচন কমিশনাররা ইভিএম সংগ্রহ ও নির্বাচনে তা ব্যবহার করতে কর্মকর্তাদের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কথা বলেন। তারা মিতব্যয়িতার সঙ্গে ইভিএমের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা রেখে নতুন ইভিএম কেনার প্রকল্প গ্রহণের ওপর জোর দেন। কমিশনাররা ইভিএএম সংরক্ষণে ওয়ারহাউজ নির্মাণ ও ইভিএম নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানোর কথা বলেন।

কর্মশালায় ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ইভিএম কেনার নতুন প্রকল্প একেনেকে অনুমোদনের লক্ষ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেন।

শেয়ার করুন