রাশিয়ার সঙ্গে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতার ভিত্তিতে গত মাস থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে আসতে শুরু করেছে ইউক্রেনের গুদামগুলোতে আটকে থাকা প্রায় আড়াই কোটি টন গম ।
কিন্তু শুরু থেকেই কেবল ইউরোপের বিভিন্ন ধনী দেশে সেই গমের চালান যাচ্ছে। খাদ্য সংকটে থাকা দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলো ইউক্রেনের গম কেনার লাইনেই দাঁড়াতে পারছে না।
রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় বন্দর শহর ভ্লাদিভস্তকে দেশটির নেতৃত্বধীন অর্থনৈতিক জোট ইস্টার্ন ইকোনোমিক ফোরামের সম্মেলনে বুধবার এই অভিযোগ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘গত কয়েক শতাব্দি ধরে ইউরোপ নিজেদের ঔপনিবেশিক প্রভু মনে করে আসছে এবং আজও তারা নিজেদের তা ই মনে করে।’
‘অভিযোগ উঠেছিল, (ইউক্রেনের গম আটকে) রাশিয়া বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট তৈরি করেছে। ইউক্রেনের গম যেন বিশ্ববাজারে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন ছিল— তার সবই আমরা নিয়েছি…..এবং এক্ষেত্রে তুরস্কেরও সক্রিয় ভূমিকা ছিল।’
‘কিন্তু আমরা দেখছি, রপ্তানির বাধা কেটে যাওয়া মাত্র ইউক্রেনের গম দখল করে নিয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন ধনী দেশ। খাদ্য সংকটে থাকা উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলো সেই গম পাচ্ছে না।’
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে সীমান্তে আড়াই মাস সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই ঘোষণার দু’দিন আগে ইউক্রেনের রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।
চলতি আগস্টে ষষ্ঠ মাসে গড়িয়েছে ইউক্রেনে রুশ সেনাদের অভিযান। এই চার মাস সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লুহানস্ক, ইউক্রেনের দুই বন্দর শহর খেরসন ও মারিউপোল, দনেতস্ক প্রদেশের শহর লিয়াম, মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জিয়ের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে রুশ বাহিনীর হাতে।
এদিকে, এই যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের বিভিন্ন শস্যগুদামে আটকা পড়ে প্রায় আড়াই কোটি টন গম ও ভুট্টা। আন্তর্জাতিক বাজারে এসব শস্য আসার পথ সে সময় না থাকায় বিশ্বজুড়ে হাওয়ার গতিতে বাড়তে থাকে গমের দাম।
অবশেষে গত জুলাই মাসের শেষ দিকে জাতিসংঘ, তুরস্ক, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সমঝোতা চুক্তির ভিত্তিতে ইউক্রেনের আটকে থাকা গম বাজারে আসার পথ তৈরি হয়।