ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস জাতির উদ্দেশে তার প্রথম ভাষণ দিয়েছেন। এতে তিনি সম্মান, সমমর্যাদা ও ভালোবাসার মাধ্যমে ব্রিটেন ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর জনগণের সেবা করার অঙ্গীকার করেছেন।
রাজা চার্লস বলেন, ‘রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ দারুণ একটা জীবন পার করেছেন। তিনি সবসময় লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা গভীর মর্মাহত।’
তিনি বলেন, ‘বুকে অনেক কষ্ট নিয়ে আজ আপনাদের সামনে কথা বলছি। পুরো রাজপরিবারের পক্ষ থেকে আমি গভীর শোকানুভূতি নিয়ে আপনাদের সঙ্গে মিলিত হয়েছি। আমার মা যে অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে তার রাজত্বের সূচনা করেছিলেন, আমিও নতুন করে সেই একই অঙ্গীকার করছি।’
রাজা তৃতীয় চার্লস বলেন, ‘আমি সম্মান, মর্যাদা ও ভালোবাসার সঙ্গে ব্রিটেন ও কমনওয়েলথের জনগণের সেবা করে যাবো। এটা আমার অঙ্গীকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারাটা জীবন ধরেই মহামান্য রানি… আমার প্রিয় মা…আমার এবং পুরো পরিবারের জন্য অনুপ্রেরণা ও উদাহরণ। আমরা তার কাছে আন্তরিক ঋণী। ভালোবাসা, স্নেহ, বোঝাপড়া ও পথ-নির্দেশনার জন্য যে কোনো পরিবার তাদের মায়ের কাছে ঋণী হতে পারে।’
রাজা তৃতীয় চার্লস বলেন, ‘কেপটাউন থেকে ১৯৪৭ সালে ২১তম জন্মদিনে কমনওয়েলথের একটি সম্প্রচারে মা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি তার জীবন নিজের জনগণের সেবায় কাটিয়ে দেবেন। এটি প্রতিশ্রুতির চেয়েও বেশি কিছু ছিল, এটি একটি গভীর ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতি যা তার পুরো জীবনকে সংজ্ঞায়িত করেছিল।’
১৯৪৭ সাল রানির করা প্রতিশ্রুতি তার পুরো জীবনকে সংজ্ঞায়িত করেছিল বলে জানান রাজা চার্লস। তিনি বলেন, ‘গোটা পরিবার আজ শোকাচ্ছন্ন। যুক্তরাজ্যের অনেক মানুষের সঙ্গে আমরা তা ভাগাভাগি করেছি। ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রানি হিসেবে আমার মা বহু জাতির মানুষের সেবা করেছেন।’
বাকিংহ্যাম প্যালেস থেকে ব্রিটিশ জাতি ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর উদ্দেশে তিনি এ ভাষণ দেন। ভাষণটি বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় তার এ ভাষণটি সরাসরি টিভিতে সম্প্রচারা করা হয়।
লন্ডনের সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল গির্জায় প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্য প্রার্থনা ও শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠানেরও অংশ ছিল এ ভাষণ। এ গির্জার দুই হাজার আসন সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত ছিল।
এর আগে লন্ডনে বাকিংহাম প্রাসাদে ফেরার পর সেখানে সমবেত বিপুল জনতা তাকে স্বাগত জানান। নতুন রাজা ১৫ মিনিট ধরে প্রাসাদের সামনে সমাগত মানুষের সঙ্গে করমর্দন করেন। এসময় অনেকে যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংগীত ‘গড সেভ দ্য কিং’ গাইতে থাকেন।
পরে রাজা তৃতীয় চার্লস ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে প্রথমবারের মত সাক্ষাৎ দেন। পার্লামেন্টে প্রয়াত রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
বাকিংহাম প্রাসাদসহ রাজকীয় বিভিন্ন বাসভবনের সামনে আজ সারাদিন ধরেই অসংখ্য মানুষ ফুল দিয়ে প্রয়াত রানির জন্য শোক ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। গির্জাগুলোতে ঘন্টাধ্বনি করা হয়। বিভিন্ন শহরে তোপধ্বনি করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। লন্ডনের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বিবৃতি দেয় বাকিংহাম প্যালেস।
ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ৭০ বছর সিংহাসনে ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কয়েক মাস আগেই তার সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর উদযাপন করা হয়েছিল।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তার পুত্র রাজা তৃতীয় চার্লসের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ ইতিহাসের এক নতুন যুগের সূচনা হচ্ছে।