আর্থিক স্বচ্ছতার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ন্যূনতম শর্ত পূরণকারী দেশগুলোর তালিকায় ঠাঁই হয়নি বাংলাদেশের। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০২২ সালের আর্থিক স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে (এফটিআর) এ কথা বলা হয়েছে। তবে শর্তপূরণে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। আর উন্নতির জন্য চারটি সুপারিশও করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষসহ চলতি বছর ১৪১ দেশের সরকারের মধ্যে ৭২টি আর্থিক স্বচ্ছতার ন্যূনতম শর্ত পূরণ করেছে। বাকি ৬৯টি দেশ ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে পারেনি। তবে এসব শর্ত পূরণে ২৭টি দেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এই আর্থিক স্বচ্ছতার মানদণ্ডে উন্নীত হয়েছে ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। অন্যদিকে বাংলাদেশের কাতারে রয়েছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও মালদ্বীপ। একই অবস্থা জান্তা পরিচালিত মিয়ানমার সরকারেরও।
মন্ত্রণালয়গুলোর আয়-ব্যয়সহ বাজেটের তথ্যের পর্যাপ্ততা ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের জন্য সরকারের বিভিন্ন চুক্তি ও নিবন্ধন (লাইসেন্স) দেওয়ার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা মূল্যায়ন করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদনে সরকারি আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষায় বাস্তব চিত্র উঠে না আসাকে বাংলাদেশের আর্থিক অস্বচ্ছতার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে বলা হয়, সরকারি আয়-ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা করে থাকে নিরীক্ষার দায়িত্বে থাকা সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বাস্তব চিত্র প্রতিফলিত হয় না। সময়মতো এ প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় না।
বাংলাদেশের এ ধরনের সংস্থা হচ্ছে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিএজি)। কিন্তু এই সর্বোচ্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীনতা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের নয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে সম্পাদিত চুক্তির মৌলিক তথ্যগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় না।
তবে বাংলাদেশের অগ্রগতির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার একটি যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। নির্বাহী বাজেট প্রস্তাব ও পাস হওয়া বাজেটের তথ্যও সরকার অনলাইনসহ অন্যান্যভাবে সহজ উপায়ে পাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। ঋণের দায়সংক্রান্ত তথ্যও পর্যাপ্ত পাওয়া যায়।
অবশ্য এতে বলা হয়েছে, বাজেটের দেওয়া তথ্য সাধারণত নির্ভরযোগ্য বিবেচনা করা হয়, যদিও বাজেটের কাগজপত্র আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নীতি মেনে প্রস্তুত করা হয়নি।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আর্থিক স্বচ্ছতা বাড়াতে চারটি সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নীতি মেনে বাজেটের কাগজপত্র প্রস্তুত করা। সিএজি স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিত ও পর্যাপ্ত জনবলের ব্যবস্থা করা। বাস্তব চিত্র, সুপারিশসহ বিস্তারিত নিরীক্ষা প্রতিবেদন যথাসময়ে প্রকাশ। প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে সম্পাদিত চুক্তির মৌলিক তথ্যগুলো জনসমক্ষে এবং সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ।