আজ ১২ সেপ্টেম্বর, বায়ান্নর ভাষাসংগ্রামী ও লেখক আহমদ রফিকের ৯৪তম শুভ জন্মদিন। তিনি একাধারে কবি, লেখক, রবীন্দ্রগবেষক ও ভাষাসংগ্রামী। আহমদ রফিক আমাদের সময়ের ইতিহাস-সাহিত্য-সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এক জীবন্ত কিংবদন্তি। ১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তদানীন্তন ত্রিপুরা জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার মেঘনাপাড়ের শাহবাজপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবদুল হামিদ, মাতা রহিমা খাতুন, স্ত্রী ডা. এসকে রুহুল হাসিন। তিনি ১৯৪৭ সালে নড়াইল মহকুমা হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা, ১৯৪৯ সালে মুন্সীগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক এবং ১৯৫৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
মত ও পথ পরিবার বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এই লেখকের জন্মদিনে রক্তিম গোলাপের শুভেচ্ছা এবং একইসঙ্গে তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছে। শুভ জন্মদিন, প্রিয় লেখক ও গবেষক আহমদ রফিক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র আহমদ রফিক প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিভিন্ন প্রগতিবাদী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি অংশ নিয়েছিলেন বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলনে। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক তিনি। ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি ছিলেন একজন লড়াকু সৈনিকের ভূমিকায়। আহমদ রফিকের ছাত্রজীবন তাই বিপর্যস্ত হয়েছিল ক্ষমতাসীন পাকিস্তানের শাসকবর্গের রক্তচক্ষুর কারণে। তাঁকে আত্মগোপন করতে হয়েছিল এবং প্রকাশ্যে ফিরে আসার পর তিনি আর চিকিৎসা পেশায় ফিরে যেতে পারেননি।
মেডিকেলের জীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার পর আহমদ রফিক কাব্য রচনা এবং বিশেষত রাজনৈতিক ইতিহাস ও রবীন্দ্র-গবেষণামূলক লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। সুদীর্ঘ জীবনে সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ে তার লেখালেখির পরিমাণ বিপুল। তাঁর সাহিত্যকর্ম বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত। রবীন্দ্র-গবেষক হিসেবে আহমদ রফিক দুই বাংলাতেই খ্যাতি অর্জন করেছেন। রবীন্দ্রবিষয়ক গবেষণার ফসল হিসেবে তিনি বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডারে একাধারে যোগ করেছেন অসংখ্য অনবদ্য সব গ্রন্থ।
প্রায় ৬৯ বছর ধরে লেখালেখির জগতে আহমদ রফিকের পথচলা। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন অফুরান শ্রদ্ধা–ভালবাসাসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। বাংলা একাডেমির ফেলো, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জীবন সদস্য, ‘রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র’ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, একুশে পরিষদ ও ভাষা আন্দোলন জাদুঘরের অন্যতম উদ্যোক্তা আহমদ রফিক সাহিত্যে গবেষণামূলক রচনার জন্য ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৯২ সালে অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার ও অগ্রণী ব্যাংক শিল্পসাহিত্য পুরস্কার, ২০১১ সালে বাংলা একাডেমি থেকে রবীন্দ্র–পুরস্কার লাভ করেন। সাহিত্যে অসামান্য অবদান রাখার জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে একুশে পদক পান। ১৯৯৭ সালে টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য উপাধিতে ভূষিত করে।
তাঁর পুরোটা জীবনই সংগ্রামী জীবন। একজন অসাধারণ বহুমাত্রিক মানুষ তিনি। লেখালেখি, আন্দোলন-সংগ্রাম ও গবেষণার মধ্য দিয়ে ভাষাকে তিনি প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর রচনা বৈচিত্র্যময় ও তাৎপর্যপূর্ণ। সাম্যবাদী চেতনা তাঁর লেখালেখিতে দিয়েছে অফুরান শক্তি।