সীমান্তে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সেনাদের মধ্যে নতুন করে বড় ধরনের লড়াইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিজেদের ৪৯ সেনা নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে আর্মেনিয়া। তবে সেনা হতাহতের কথা জানালেও সংখ্যা প্রকাশ করেনি আজারবাইজান। খবর রয়টার্স ও আল-জাজিরার।
নতুন করে এই সংঘর্ষের জেরে পুরোদমে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংঘর্ষের জন্য পরস্পরকে দায়ী করেছে ইয়েরেভান ও বাকু। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো দুই পক্ষকেই সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আর্মেনিয়া বলেছে, সীমান্তে সংঘর্ষে তাদের ৪৯ জন সেনা নিহত হয়েছেন। জেরমুক, গরিস, কাপানসহ আজারবাইজান সীমান্তবর্তী কয়েকটি শহরে আজ মঙ্গলবার দিনের শুরুর দিকে গোলাবর্ষণ করা হয়। আজারবাইজানের এই ‘বড় ধরনের উসকানির’ জবাব দিয়েছে দেশটি।
হামলার জন্য আজারবাইজানকে দায়ী করে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান বলেন, নাগোরনো-কারাবাখের ‘স্ট্যাটাস’ নিয়ে সমঝোতায় রাজি না হওয়ায় এই হামলা চালানো হয়েছিল। পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, সংঘর্ষের তীব্রতা কমেছে, তবে একটি অথবা দুটি ফ্রন্টে আজারবাইজান থেকে হামলা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে সীমান্তবর্তী দাশকেসান, কেলবাজার ও লাচিন এলাকায় ‘বড় ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড’ চালানোর জন্য আজারবাইজান আর্মেনিয়াকে দায়ী করেছে বলে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ট্রেঞ্চ মর্টারসহ বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে দেশটির সেনা অবস্থানে হামলা চালানো হয়েছে।
আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, আজারবাইজানের সেনারা নিহত হয়েছেন, তবে কতজন নিহত হয়েছেন সে সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।
অবিলম্বে যেকোনো ধরনের সামরিক সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই স্পষ্ট করে বলেছি, এই সংঘাতের কোনো সামরিক সমাধান নেই।’
আজারবাইজান ও আর্মেনিয়াকে সংঘাত বন্ধ ও অস্ত্রবিরতি চুক্তি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। এক বিবৃতিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটি মস্কোর স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতা করেছে। উভয় পক্ষই চুক্তির শর্ত মেনে চলবে বলে আশা প্রকাশ করেছে রাশিয়া।
নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভেতরে অবস্থিত একটি ভূখণ্ড, তবে এর বাসিন্দাদের অধিকাংশই জাতিগতভাবে আর্মেনীয়। নাগোরনো-কারাবাখসহ আশপাশের বিশাল আজারবাইজানি ভূখণ্ড দখল করে রেখেছিল আর্মেনিয়া।
গত ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সীমান্ত সংঘাত থেকে দুই দেশের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ছয় সপ্তাহের লড়াইয়ের পর রাশিয়ার মধ্যস্থতায় চুক্তির মাধ্যমে নিজ ভূখণ্ড উদ্ধার করে আজারবাইজান। তবে চুক্তিতে নাগোরনো-কারাবাখের ‘স্ট্যাটাস’ অনিষ্পন্ন ছিল।
এ নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার সেনাদের মধ্যে নিয়মিত বিরতিতে সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। সবশেষ এই সংঘাতের জেরে দক্ষিণ ককেশাসের দেশ দুটির মধ্যে আবার পুরোদমে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।