জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা: বাংলাদেশের পদক্ষেপ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অনুপ্রেরণার

বিশ্বব্যাংক
বিশ্বব্যাংক। ফাইল ছবি

স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যু শতগুণ কমিয়েছে। যা অন্যান্য জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য অনুপ্রেরণার। তবে দ্রত বর্ধনশীল জনসংখ্যা, পরিবেশগত অবনতি এবং ক্রমবর্ধমান জলবায়ু ঝুঁকি উপকূলীয় অঞ্চলের বিদ্যমান প্রাকৃতিক ও অবকাঠামো ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যেখানে প্রায় চার কোটি মানুষের বসবাস। দুর্যোগ সহনশীলতা বাড়াতে বাংলাদেশের আরও জরুরি কিছু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক রিপোর্টে এসব কথা জানানো হয়েছে।

সংস্থাটি মনে করে, জলবায়ু ঝুঁকি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশকে এর উন্নয়ন অর্জন ধরে রাখতে এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু সহনশীলতা জোরদারে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

‘বাংলাদেশ অ্যানহান্সিং কোস্টাল রেজিলিয়েন্স ইন এ চেঞ্জিং ক্লাইমেট’ নামের এ রিপোর্ট জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের যাত্রা তুলে ধরেছে এবং উপকূলীয় এলাকায় সহনশীলতা বাড়াতে অধিকতর কার্যক্রম হাতে নেওয়ার সুপারিশ করেছে। ঝুঁকির চালিকাগুলো কী কী এবং সরকার কীভাবে এসব ঝুঁকি কমিয়েছে সে বিষয়েও রিপোর্টে বিশ্লেষণ রয়েছে। একই সঙ্গে নতুন প্রেক্ষিত ও উদ্ভাবনী সমাধানের পরামর্শ এসেছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকলেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনে বিশ্বে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা রেখেছে এবং উপকূল সহনশীলতায় সক্রিয়ভাবে বিনিয়োগের জন্য পরিচিত। বাংলাদেশ দেখিয়েছে যে, দুর্যোগ ঝুঁকি কমাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ কীভাবে জীবন রক্ষা করে, অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি কমায় এবং উন্নয়ন অর্জন রক্ষা করে। একটি কৌশলগত নীতি কাঠামোর আওতায় মাঠ পর্যায়ে অভিযোজন এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান এবং উদ্ভাবনে উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে অবকাঠামো বিনিয়োগে নানা উদ্যোগের কারণে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যানড্যান চেন বলেন, উপকূলে সহনশীলতা কোনো অপরিবর্তনীয় লক্ষ্য নয়, বরং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর মধ্যে সমন্বয় খুঁজে বের করা এর লক্ষ্য। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে গত ৫০ বছর ধরে জলবায়ু সহনশীলতা এবং দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নতিতে সহায়তা করছে। আজ বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি এবং জলবায়ু সহনশীলতার উন্নতিতে মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করছে, যা অন্যান্য জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য অনুপ্রেরণার।

উপকূলে জলবায়ু সহিষ্ণুতায় অধিকতর বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন করবে এবং এক্ষেত্রে এখনই কাজ করতে হবে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

উপকূলীয় এলাকায় সহনশীলতা বাড়াতে রিপোর্টে সাতটি মূল সুপারিশ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- অবকাঠামোর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ জোরদার; স্থানীয় অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি এবং অত্যাধুনিক মডেলিং টুলসের ব্যবহার; পরিবর্তনশীল জলবায়ু এবং উপকূলে গতিশীল প্রক্রিয়ার কথা বিবেচনা করে অভিযোজনযোগ্য ডেল্টা ব্যবস্থাপনার দিক-নির্দেশনামূলক নীতি হিসেবে একটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামো ব্যবহার; প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের পরিপূরক হিসেবে অবকাঠামো বিনিয়োগ; টেকসই সহিষ্ণুতার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক কমিউনিটি অংশীদারিত্ব; জীবিকার অভিযোজন; সমন্বিত কাঠামো প্রতিষ্ঠা; যার কেন্দ্রে থাকবে ঝুঁকি প্রশমন ও অন্তভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি, সমৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন।

বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এবং রিপোর্টটির সহ-রচয়িতা স্বর্ণা কাজী বলেন, উচ্চ বিনিয়োগের প্রয়োজনীতা বিবেচনা করে আমরা অতীতের সম্পৃক্ততা থেকে শিখতে পারি এবং উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে পেতে পারি।

রিপোর্টে প্রথমবারের মতো ১৯৬০ সালের পর থেকে এ বিষয়ে সব বড় প্রকল্পের মূল্যায়ন করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এবং রিপোর্টটির আরেক সহ-রচয়িতা ইগনাসিও উরুশিয়া বলেন, একটি মৌলিক শিক্ষা হলো যে, বাংলাদেশের জন্য প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান অথবা ‘গ্রিন-গ্রে’ অবকাঠামোর মিশ্রণের হাইব্রিড সমাধানের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এ রিপোর্ট বিশ্বব্যাংক গ্রুপের আসন্ন নতুন ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি ক্লাইমেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট (সিসিডিআর)’ এর পরিপূরক। সিসিডিআর জলবায়ু পরিবর্তন এবং উন্নয়নের বিবেচনাকে একত্রিত করেছে।

১৯৭২ সাল থেকে বিশ্বব্যাংক উপকূল ও জলবায়ু সহনশীলতা তৈরি এবং দুর্যোগে প্রস্তুতিতে সহায়তা করছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুত প্রথম পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে ভোলায় মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের পর উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ প্রস্তুতির উন্নয়নে সহায়তা প্রকল্প ছিল। বর্তমানে ১ দশমিক ৯ বিলিয়র ডলারের চলমান কার্যক্রমসহ বিশ্বব্যাংক বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র ও বাঁধ নির্মাণ, পূর্বশতর্কীকরণ ব্যবস্থা, আবহাওয়া সংক্রান্ত সেবা এবং বনায়নে সহায়তা করছে।

শেয়ার করুন