সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি

দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ হাসপাতালের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউ প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ইকুইপমেন্ট দিয়েছি, সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি, কিন্তু তারপরও চিকিৎসক ও নার্সের অভাব দেখা যায়। অনেক ডাক্তার ও নার্স জেলা, উপজেলা পর্যায়ে যেতে চান না। তাদের রাজধানীতেই থাকতে হবে, এমন নয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। আশা করি, আমাদের ডাক্তাররা বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখবে এবং চিকিৎসা সেবা দিতে উপজেলা পর্যায়ে যাবেন।

তিনি বলেন, উপজেলার হাসপাতালগুলো মাত্র ৩১ শয্যাবিশিষ্ট ছিল। আমরা জনসংখ্যা ও রোগীর হিসাব নিয়ে অনেক হাসপাতাল ১০০ শয্যার করে দিয়েছি। জেলার হাসপাতালগুলো ১০০ শয্যার ছিল। রোগী কেমন আসে সেটার হিসাব করে কোথাও ২৫০ শয্যার এবং বড় বড় শহরগুলোতে ৫০০ শয্যা পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দিয়েছি। এর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবার আরও সুযোগ করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ, অনলাইনেও চিকিৎসা সেবা দেওয়া যায়। সেটা আরও জোরদার হওয়া দরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েব ক্যামেরার মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে যাতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন উপজেলার মানুষ যাতে চিকিৎসা সেবা পান, সেদিকে আরও নজর দিতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৩ তলাবিশিষ্ট হাসপাতালটির রয়েছে দ্বিতল বেজমেন্ট। ৭৫০ শয্যার হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে থাকবে ১৪টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, ১০০ শয্যার আইসিইউ। জরুরি বিভাগে থাকবে ১০০ শয্যা, ভিভিআইপি কেবিন ছয়টি, ভিআইপি কেবিন ২২টি এবং ডিল্যাক্স শয্যা থাকবে ২৫টি। সেন্টারভিত্তিক প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকবে আটটি করে শয্যা। হাসপাতালটিতে থাকবে এক্স-রে, এমআরআই, সিটি-স্ক্যানসহ অত্যাধুনিক সব ডায়াগনস্টিক সুবিধা।

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে বিশেষজ্ঞসহ মোট ৩শ চিকিৎসক ও ১২শ স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করার কথা রয়েছে।

ছয়টি বিশেষায়িত সেন্টারের মাধ্যমে চলা এ হাসপাতালে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের পাশাপাশি দুই বছরের জন্য ৫৬ জন কোরীয় কনসালট্যান্ট কাজ করবেন। যারা দেশীয় জনবল আরও দক্ষ করতে ভূমিকা রাখবেন।

এছাড়া হাসপাতালটিতে প্রথম পর্যায়ে থাকবে অটিজম সেন্টার, ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সেন্টার, কার্ডিও ও সেরিব্রো ভাস্কুলার সেন্টার এবং কিডনি সেন্টার।

দ্বিতীয় পর্যায়ে থাকবে রেসপিরেটরি মেডিসিন সেন্টার, জেনারেল সার্জারি সেন্টার, অপথালমোলজি, ডেন্টিস্ট্রি, ডার্মাটোলজি সেন্টার এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন বা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার।

এখানে বিশ্বমানের চিকিৎসা বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন, রোবোটিক অপারেশন, জিন থেরাপির ব্যবস্থাও থাকবে। এছাড়া হাসপাতালে সুন্দর পরিবেশের জন্য থাকবে সানকেন গার্ডেন, রুফটপ গার্ডেন ও বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব সুযোগ-সুবিধা। থাকবে উন্নতমানের আধুনিক ব্যবস্থাপনার বহির্বিভাগ, ইনফো ডেস্ক এবং ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টার।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতালটি নির্মাণে এক হাজার ৩শ কোটি টাকার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া দিয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। এ ঋণ ৪০ বছর মেয়াদি। তবে প্রথম ১৫ বছর কোনো টাকা পরিশোধ করতে হবে না। তারপর থেকে ০ দশমিক ১ শতাংশ সুদে এ ঋণ শোধ করতে হবে।

শেয়ার করুন