পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল আগামী বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় আগামী বছরের শেষে ও এর পরের বছরের শুরুতে সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সংসদ নির্বাচনের আগে অন্যবারের মতো এবারও ইসির কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ ঘোষণা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে থাকা কিছু অন্তরায় চিহ্নিত করার বিষয়গুলোকে আমরা স্বাগত জানাই।
আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার ক্ষেত্রে যে কয়েকটা বাধা দেখছে ইসি, এর প্রথমটি হচ্ছে, সংস্থাটির প্রতি কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আস্থাহীনতা। সরকারবিরোধী কয়েকটি রাজনৈতিক দল বর্তমান ইসি গঠনের শুরু থেকে তাদের অনাস্থার কথা বলে আসছে। সাংবিধানিক এ সংস্থাও মনে করে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কমিশনের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা থাকা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যা অবশ্যই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন ও গণতন্ত্র চর্চার জন্য ইতিবাচক।
রাজনৈতিক দলগুলোর যেন আস্থা ফিরে আসে ইসির প্রতি, এ দায়িত্ব সংস্থাটিকেই নিতে হবে। নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার মতো আইন, ক্ষমতা সংস্থাটির আছে। সংবিধান ইসিকে অবাধ ক্ষমতা দিয়েছে। বিতর্কমুক্ত নির্বাচনের পথে থাকা যেসব অন্তরায় চিহ্নিত করেছে ইসি, সেগুলোকে দূর করতে তারা স্বাধীনভাবে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করলে রাজনৈতিক দলগুলোর তাদের প্রতি আস্থা ফিরে আসবে বলে আমরা মনে করি।
অবশ্য কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে অনাস্থা কেটে যাবে বলে খোদ ইসিও মনে করে। সেগুলোর বাস্তবায়নে সংস্থাটির কাজগুলো যেন তাই কিছুতেই লোক দেখানো না হয়। আস্থার সংকট কমানোর লক্ষ্যে কমিশনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দরকার। ইসির দায়িত্ব সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় অবস্থার অবসান করা। আর সেই কাজ তাদের এখনই শুরু করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বাধাগুলো থেকে উত্তরণের উপায় কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখ করেছে ইসি। সেখানে সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, সমর্থক সংশ্লিষ্টদের দায়-দায়িত্ব তুলে ধরা হয়েছে। পরবর্তী সংসদ নির্বাচনকে বিতর্কমুক্ত করতে সবাইকে তাই দায়িত্বশীল হওয়ার আহবান জানাই আমরা।
দেশের যে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতার বক্তব্যে ইসির প্রতি আস্থা-অনাস্থার দোলাচল প্রকাশিত হচ্ছে, তারাও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিজেদের দায়িত্ব পালন না করার সুযোগ নেই। কোথাও নির্বাচনী ব্যবস্থায় কোনো ধরনের ত্রুটি থাকলে কোনো রাজনৈতিক দল সেখানে নির্বাচন বর্জন করলে জনগণের কাছে ত্রুটিগুলো ধরা পড়ে না। রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরই সেগুলো স্পষ্ট হয়। তাই নির্বাচনী ব্যবস্থাকে গণতন্ত্রের স্বার্থে ত্রুটিমুক্ত করতে সবদলের নির্বাচনে অংশ নেওয়া দরকার, নির্বাচন বর্জন কোনো সমাধান হতে পারে না।