বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি, ঢাকা-এর সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ড. আকবর আলি খান তাঁর জীবদ্দশায় রাষ্ট্রীয় কোনো পদক পাননি। একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, এমনকি স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার সকল যোগ্যতা তাঁর ছিল। তিনি মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছিলেন কোনো রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, তিনি মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা পালন করেছিলেন সিভিল সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা হিসেবে, যেটি সেই সময়ের জন্য খুব বিশাল ব্যাপার ছিল। তবে রাষ্ট্রীয় কোনো পদক না পেলেও তিনি এদেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ের পুরস্কার পেয়েছেন, এটাই তাঁর মাহাত্ম্য, এখানে তাঁকে আমাদের শ্রদ্ধা।
শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ড. আকবর আলি খানের মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি, ঢাকা কর্তৃক আয়োজিত শোকসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, অনেকেই আছেন যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ধারণ করেন না, কিন্তু ড. আকবর আলি খান সাহেব ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে হৃদয়ে ধারণ করতেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া যে তাঁর নিজের এলাকা, জন্মভূমি এটি তিনি স্বীকার করতেন। আর সেজন্যই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষও তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন।
তিনি বলেন, ড. আকবর আলি খানে জীবনের দুটি ঘটনার কারণে তাঁকে জাতি চিরকাল স্মরণ করবে; একটি হলো একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে সিভিল সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা। আরেকটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব তিনি পালন করেছিলেন ইয়াজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সেই সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করে। সেদিন যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে ড. আকবর আলি খান, সুলতানা কামাল এরা যদি বেরিয়ে না আসতেন তাহলে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন হয়ে যাওয়ার একটি সম্ভাবনা ছিল। একজন মানুষের জীবনে এরকম ঐতিহাসিক দুইটি ঘটনা ঘটেছে, সেজন্য আমরা তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপ দেখেছি। কাজেই মানুষ এখন আর সেটি চিন্তাই করতে পারে না। রাজনীতিকে বিকেন্দ্রীকরণ করা, সব পেশার মানুষকে নির্যাতন করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদেরও তারা কারাগারে পাঠিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কফিনে বিএনপিই তখন শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছিল। তাদের লজ্জা হয় না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সে সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন করেছিল একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে জনগণকে উদ্ধার করার জন্য। আকবর আলি খান অত্যন্ত বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন বলেই তিনি পরবর্তীসময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে আকবর আলি খানের অবদান তুলে ধরে কামরুল ইসলাম বলেন, সে সময় উনি নিজ দায়িত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সেই সময়ে বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারে তিন কোটি টাকা জমা দিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আরও বলেন, মাঝে তিনি যখন আবার শিক্ষকতায় ফিরে আসতে চাইলেন, বঙ্গবন্ধু তাকে সে সুযোগ দিয়েছিলেন। তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিলেও বঙ্গবন্ধু সেটি গ্রহণ না করে, তাকে লম্বা ছুটি দিয়েছিলেন। আকবর আলী খান বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি, ঢাকা-এর অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দীন মঈনের সঞ্চালনায় শোকসভায় বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি ঢাকা-এর সাধারণ সম্পাদক এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মোঃ খলিলুর রহমান, পিএসসির সদস্য প্রফেসর ড. দেলোয়ার হোসেন, সাবেক সচিব গোলাম রাব্বানী, সাংবাদিক সৈয়দ আক্তার ইউসুফ, গ্লোবাল টিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা প্রমুখ।