বেশিদিন টিকল না চাল আর ডিমের দাম কমার গতি। সপ্তাহখানেক কিছুটা স্বস্তি দিয়ে আবারও বাড়তে শুরু করেছে খাদ্যপণ্য দুটির দর। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের চালের (৫০ কেজি) বস্তায় দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। খুচরায় বেড়েছে প্রতি কেজিতে দুই টাকা করে। একইভাবে কয়েক দিন বিরতি দিয়ে ডিমের ডজনেও বেড়েছে ১০ টাকা।
চাল ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত চাল রপ্তানিতে শুল্ক বসিয়েছে। এতে কমে যাবে আমদানি। এ কারণে দেশের বাজারে প্রভাব পড়েছে। আর ডিম ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন বৃষ্টিকে। তাদের মতে, বৃষ্টিতে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় ডিমের দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে ডিমের দাম কমে আসার ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও চালের ক্ষেত্রে তেমন আভাস মেলেনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে মোটা চালের কেজি (স্বর্ণা ও লতা) বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায়। তিন দিন আগে এই চাল বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকায়। কেজিতে দুই টাকা বেড়ে মাঝারি চাল (বিআর-২৮) ৫৫ থেকে ৬০ এবং চিকন চাল (মিনিকেট) ৭৪ থেকে ৭৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে।
বন্যায় ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবার মৌসুমেই চালের দাম ছিল চড়া। দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর তা আরেক দফা বাড়ে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার চাল আমদানির অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি দুই ধাপে শুল্ক্ক ৬২ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। আমদানিও হয়েছে প্রায় এক লাখ টনের মতো। পাশাপাশি বাজারে চলে অভিযান। এসব পদক্ষেপের কারণে চড়া বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করে। সব ধরনের চালের কেজিতে তিন-চার টাকা কমেছিল। তবে সপ্তাহখানেক পর আবারও বাড়তে শুরু করেছে দর। গত ৮ সেপ্টেম্বর ভারত কিছু কিছু চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এর ফলে দেশের চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
মালিবাগ বাজারের খালেক রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন জানান, গত সাত-আট দিনে কেজিতে চালের দাম কমেছিল দুই থেকে তিন টাকা। চাল রপ্তানিতে ভারত শুল্ক্ক আরোপের খবরে দেশের চালের মোকামে (মিল পর্যায়ে) বস্তাপ্রতি দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকার মতো বেড়েছে। শুধু তাই নয়, অগ্রিম টাকা দিয়েও চাহিদামতো চাল মিলছে না। মোকামে ১০০ বস্তা চালের ক্রয়াদেশ দিলে তাঁরা দেন ৬০ থেকে ৭০ বস্তা।
প্রায় একই ধরনের কথা বলেন কারওয়ান বাজারের মেঘনা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী সারোয়ার হোসেন। এই ব্যবসায়ী জানান, দুই দিনের ব্যবধানে মিলাররা বস্তায় ১০০ টাকার বেশি বাড়িয়েছে। দাম আরও বাড়বে বলে সরাসরি তা জানিয়ে দিয়েছে। তবে বড় বড় করপোরেট কোম্পানি চালের উৎপাদন ও বাজারজাত প্রক্রিয়ায় আসার কারণে বাজার এমন অস্থিতিশীল বলে মনে করেন তিনি।
কিছু সিন্ডিকেট ও মজুতদারের কারণে চালের বাজার অস্থির হচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচ আর খান পাঠান সাকি। তিনি বলেন, মিলগেট থেকে কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তার কাছে পৌঁছায় চাল। এই হাতগুলোর মধ্যেই দামের কারসাজি হয়ে থাকে।
চালের মতো ডিমের দামও বাড়ছে। মাসখানেক আগে দাম বেড়ে ডিমের ডজন ১৬০ টাকায় ঠেকেছিল। এরপর তা কমতে শুরু করে। একপর্যায়ে সপ্তাহ দুয়েক আগে তা নেমে আসে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। গত ১০ থেকে ১২ দিনে দুই দফা দাম বেড়ে এখন ফার্মের ডিমের (বাদামি) ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। তবে ফার্মের সাদা ডিমের ডজন ৫ টাকা কমে কেনা যাচ্ছে। হাঁসের ডিমের দামও বেড়েছে। এক ডজন হাঁসের ডিম কিনলে গুনতে হবে ১৮০ থেকে ২১০ টাকা।
মালিবাগ বাজারের ডিম ব্যবসায়ী মো. বাচ্চু বলেন, তিন দিন ধরে টানা বাড়ছে ডিমের দাম। প্রতিদিনই নতুন দর দিচ্ছেন পাইকাররা। এ কারণে গত দুই-তিন দিনে খুচরায় ডজনে দাম বেড়েছে ১০ টাকার মতো।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বাজারে সবজির সরবরাহ কম। তা ছাড়া বৃষ্টির কারণে অনেকেই বাসাবাড়ি থেকে বের হয়ে বাজারে যেতে পারেননি। ফলে ডিমের ওপর নির্ভরশীলতা কিছুটা বেড়েছে। এতে ডিমের চাহিদা বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দামে। তবে বাড়তি এই দর বেশিদিন থাকবে না। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই দাম কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।