রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংগৃহীত ছবি

রাজধানীর শনির আখড়া এলাকার বাসিন্দা তালেবুল হাসান বাজার থেকে গরুর মাংস কিনে বাসায় ফেরেন সকালেই। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও সেই মাংস রান্না হয়নি। রান্না হতে রাত হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা। কারণ সকাল থেকেই গ্যাসের স্বল্প চাপ ছিল। প্রায় প্রতিদিনই এমন সমস্যা থাকছে তাদের।

শুধু তালেবুল হাসানের বাসায় গ্যাস সরবরাহের এমন সমস্যা চলছে বিষয়টি এমন নয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে গ্যাসের সংকট চলছে।

বিষয়টি স্বীকার করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা জাতীয় সমস্যা, এখানে তাদের কিছু করার নেই। কবে নাগাদ গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে এমন তথ্যও জানাতে পারছেন না তিতাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, পুরান ঢাকা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, মালিবাগ, রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডা, মুগদা, উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের এমন সংকট চলছে প্রতিদিনই। গ্যাস সংকটের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নিত্যদিনের কাজ। অনেকেই বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার কিনে প্রাত্যাহিক রান্নার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় ১৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে সরবরাহ হচ্ছে ১৬০ কোটি ঘনফুট। ফলে রাজধানীতে এমন গ্যাসের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী ও তার আশেপাশে গ্যাস সরবরাহ করা তিতাস গ্যাস প্রতিদিনের চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। এছাড়া প্রতিদিনই অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেও সুফল আনতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।

রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা কলিম উদ্দিন বলেন, বাসায় প্রতিদিন গ্যাসের চাপ কম থাকে, ফলে রান্নাসহ সব কাজই ধীরগতিতে করতে হয়। বেশ কিছুদিন ধরে এমন সমস্যা হচ্ছে। বারবার অভিযোগ জানানোর পরও কোনো লাভ হচ্ছে না। প্রতিদিন সমস্যা আরও বাড়ছে। মাঝে মাঝে গ্যাস একেবারেই থাকে না, আবার যখন গ্যাস আসে তখন চাপ থাকে কম।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আলেয়া খাতুন। গ্যাস না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আগে সকাল ৯-১০টা পর্যন্ত গ্যাস ভালোই থাকত, এরপর গ্যাসের চাপ কমে যেত। আবার মাঝে মাঝে বন্ধও হয়ে যেত। সন্ধ্যার দিকে ফের গ্যাস আসত। তখন গ্যাসের রুটিন মেনেই রান্নার কাজ সারতাম। কিন্তু এখন গ্যাস সংকট থাকছে প্রতিদিনই। এ জন্য সারা দিন রান্না করতে পারি না।

এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী শবিউল আওয়াল বলেন, গ্যাস সরবরাহের সংকট এখন একক সমস্যা নয়, এটি জাতীয় সমস্যা। আমরা যতটুকু গ্যাস পাচ্ছি তাই সাপ্লাই দিচ্ছি। কবে নাগাদ এই সমস্যার সমাধান হবে তা নির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। আমরা ঠিকমত সাপ্লাই পেলে গ্রাহক পর্যায়ে আর সমস্যা থাকবে না।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্যাস সরবরাহ আমরা কম পাচ্ছি এটা ঠিক। এ কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ থাকে। আমরা নিয়মিত অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণেও কিন্তু বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট আরও বেশি হয়।

শেয়ার করুন