তাইওয়ান নিয়ে বাইডেনের মন্তব্য মার্কিন নীতির ‘গুরুতর লঙ্ঘন’: চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

চীন-তাইওয়ান
চীন-তাইওয়ান । সংগৃহীত ছবি

চীন তাইওয়ানে হামলা চালালে মার্কিন বাহিনী ভূখণ্ডটিকে রক্ষা করবে বলে মন্তব্য করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্টের সর্বশেষ এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেইজিং।

এশিয়ার পরাশক্তি এই দেশটির দাবি, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে চীনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রক্ষা করবে বলে বাইডেনের দেওয়া সর্বশেষ বক্তব্য দ্বীপটির প্রতি ওয়াশিংটনের নীতির ‘গুরুতর লঙ্ঘন’। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর উত্তেজনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ই এ বিষয়ে বেশ কড়া বক্তব্য দিয়েছে। তবে তাইওয়ান ইস্যুতে এটিই জো বাইডেনের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে স্পষ্ট বক্তব্য এবং এটি বেইজিংকে নিশ্চিতভাবেই ক্ষুব্ধ করবে বলে ধারণা করা হয়েছিল।

রোববার সিবিএস নিউজের প্রকাশিত সাক্ষাৎকার ‘৬০ মিনিটস’-এ বাইডেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়- মার্কিন বাহিনী চীনের দাবিকৃত স্ব-শাসিত দ্বীপটিকে রক্ষা করবে কিনা। বাইডেন উত্তর দেন: ‘হ্যাঁ, যদি বাস্তবে সেখানে (তাইওয়ানে) অভূতপূর্ব কোনো আক্রমণ হয়, তাহলে (রক্ষা করবে)।’

বাইডেন ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন সেটি আরও স্পষ্ট করতে মার্কিন বাহিনী চীনা আক্রমণের ক্ষেত্রে তাইওয়ানকে রক্ষা করবে কিনা তা জিজ্ঞাসা করা হলে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তর দেন: ‘হ্যাঁ।’

বাইডেনের এমন মন্তব্যের পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই মন্তব্য… তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন না করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছে এবং তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদী স্বাধীনতাকামী বাহিনীকে গুরুতর ভুল সংকেত পাঠাচ্ছে।’

এএফপি বলছে, ওয়াশিংটন ১৯৭৯ সালে তাইওয়ানের সাথে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। বৈশ্বিক পরাশক্তি এই দেশটি চীনের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে বেইজিংকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। কিন্তু একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে বেশ কৌশলী ভূমিকা পালন করে আসছে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘আমরা (তাইওয়ানের সঙ্গে) শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনের সম্ভাবনার জন্য সবচেয়ে বড় আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাতে ইচ্ছুক। একইসঙ্গে আমরা কখনোই দেশকে বিভক্ত করার লক্ষ্যে পরিচালিত কোনো কর্মকাণ্ডকে বরদাস্ত করব না এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার আমাদের রয়েছে।’

এমনিতেই তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছে। তার ওপর গত আগস্টে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ানে সফর উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয়।

এর মধ্যে গত সপ্তাহে মার্কিন সিনেটের একটি কমিটি তাইওয়ানকে সরাসরি বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা প্রদান এবং সম্পর্ককে আরও জোরদার করার পদক্ষেপ নিয়েছে।

এসব বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে সোমবার মাও বলেন, ‘আমরা তাইওয়ান ইস্যুর গুরুত্ব এবং উচ্চ সংবেদনশীলতাকে সম্পূর্ণরূপে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানাচ্ছি… (এবং) তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন না করার জন্য মার্কিন নেতারা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা আন্তরিকভাবে বাস্তবায়ন করতেও ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

শেয়ার করুন