ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসন জাতিসংঘ সনদকে পদদলিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রুশ আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, রাশিয়ার হামলা আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা-স্থিতিশীলতাকেও অস্থিতিশীল করে তুলছে।
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতার দাপট নয়, (বিশ্বব্যাপী) আইনের শাসনের জয় হওয়া উচিত। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিতে গিয়ে জাপানি প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এদিন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এমন একটি কাজ যা জাতিসংঘ সনদের দর্শন ও নীতিকে পদদলিত করে… এটা কখনোই সহ্য করা উচিত নয়।’
ফুমিও কিশিদা জাপানের হিরোশিমা শহরের বাসিন্দা এবং বিশ্বে এটিই প্রথম শহর যেটি পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার হয়েছিল। আর তাই রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র (ব্যবহারের) হুমকিরও নিন্দা করেছেন জাপানি এই প্রধানমন্ত্রী।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। রুশ এই আগ্রাসন শুরুর কয়েকদিনের মাথায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশের পরমাণু শক্তিকে ‘বিশেষ সতর্কাবস্থায়’ রাখার কথা ঘোষণা করেন। রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানদের পুতিন সেসময় বলেছিলেন, পশ্চিমা বিশ্বের ‘আগ্রাসী মনোভাবের’ কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সম্প্রতি ইউক্রেনীয় বাহিনীর তীব্র হামলার মুখে উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ প্রদেশের ইজিয়ামে নিজেদের প্রধান ঘাঁটি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয় রাশিয়া। ইউক্রেনের এই অঞ্চলটি চলমান যুদ্ধের প্রধান ফ্রন্ট লাইনগুলোর একটি।
চলমান সামরিক অভিযানে ইজিয়ামকে লজিস্টিক বেস হিসাবে ব্যবহার করছিল রাশিয়ান বাহিনী। এখান থেকেই রুশ সেনারা দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক নিয়ে গঠিত ডনবাস অঞ্চলে কয়েক মাস ধরে আক্রমণ পরিচালনা করে আসছিল।
তবে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ব্যাপক হামলায় গত সপ্তাহান্তে হাজার হাজার রুশ সৈন্য ইজিয়াম থেকে পালিয়ে যায়। তারা বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম ফেলে রেখে যায়। এরপর থেকে শহরটি ইউক্রেনের অধীনে রয়েছে। ইউক্রেনে হারানো ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করার জন্য জাতীয়তাবাদীদের চাপের মধ্যে রয়েছে রাশিয়া।
এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট পুতিন সম্প্রতি হুঁশিয়ারি দেন যে, রুশ সৈন্যদের আরও চাপের মধ্যে রাখা হলে মস্কো আরও শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিক্রিয়া জানাবে। আর এতে উদ্বেগ দেখা দেয় যে, তিনি হয়তো ইউক্রেনে ছোট পারমাণবিক বা রাসায়নিক অস্ত্রের মতো কোনো অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়া গত মাসে একজন রাশিয়ান কূটনীতিক জাতিসংঘে বলেন, ইউক্রেনের চলমান সংঘাতে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কোনো নিশ্চয়তা না থাকলেও আগ্রাসন নিয়ে ন্যাটো দেশগুলোর ‘সরাসরি আগ্রাসনের’ জবাবে মস্কো তার পারমাণবিক অস্ত্রাগার ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এসব বিষয়কে ইঙ্গিত করে মঙ্গলবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া এবার যা করেছে সেটির মতো পরমাণু অস্ত্রের এই হুমকি এবং সেগুলোর ব্যবহার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি। এটি কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।’
কিশিদা আরও বলেন, তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সাথে দেখা করতে প্রস্তুত ছিলেন। মূলত পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির পাশাপাশি কয়েক দশক আগে জাপানি নাগরিকদের অপহরণ সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধান করতে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে কিমের সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছুক তিনি।