রাশিয়ার স্থানীয় সময় তখন মধ্যরাত। যুদ্ধে যাওয়ার মতো উপযুক্ত বলে বিবেচিত ব্যক্তিদের জরুরি তলব করা হলো। স্কুলশিক্ষকদের বলা হলো, তারা যেন যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য উপযোগী মানুষদের কাছে চিঠি পাঠান। পুরুষদের ব্যাগ গুছিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে নিয়োগকেন্দ্রে পৌঁছাতে বলা হয়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষণা অনুযায়ী রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে সেনা সমাবেশের প্রথম দিনটিতে নিয়োগকেন্দ্রগুলোতে আবেগঘন দৃশ্য দেখা গেছে। সরকারের চিঠি পেয়ে যুদ্ধে যেতে বাধ্য হওয়া এই মানুষদের স্বজনেরা প্রিয় মানুষকে বিদায় দিতে এসে কাঁদছিলেন। কিছু নিয়োগকেন্দ্রে বিক্ষোভও দেখা গেছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘আংশিক সেনা সমাবেশ’ করার ঘোষণা দেন। সামরিক বাহিনীর রিজার্ভ সেনাদের একটি অংশকে ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম রাশিয়া এ ধরনের সেনা সমাবেশ করতে যাচ্ছে। এর আওতায় নতুন করে তিন লাখের বেশি সেনাকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। যাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের উপযোগী বিবেচনা করা হচ্ছে, তাদের বাড়িতে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ছিল সেনা সমাবেশের প্রথম দিন।
পূর্বাঞ্চলীয় সাইবেরিয়ার বুরিয়াতিয়াতে জাকামেনস্কি অঞ্চলের এক নারী বলেন, মধ্যরাতে কুকুরগুলো যখন ডেকে উঠল, তখন তার মনে হচ্ছিল কোনো একটা বিপদ হচ্ছে। ওই গ্রামে ৪৫০ জন বাসিন্দার বসবাস। গ্রামের প্রধান বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নিয়োগপত্র দিয়েছেন। সে রাতে ২০ জনের বেশি বাসিন্দাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছেন তিনি। গ্রামপ্রধান বলেন, পরদিন সকালে সেসব মানুষ যখন যুদ্ধক্ষেত্রের উদ্দেশে রওনা করছিলেন, তখন এক আবেগঘন দৃশ্য তৈরি হয়।
কেউ তখন ভদকা পান করেছিলেন। অনেকে আবার স্বজনদের সঙ্গে আলিঙ্গন করে একে অপরকে নিরাপদ থাকতে বলেছিলেন। মিনিবাসে করে তারা যখন চলে যাচ্ছিলেন, তখন পরিবারের নারীরা কাঁদছিলেন এবং ক্রস প্রতীক তৈরি করছিলেন।
অধিকার সংগঠন ফ্রি বুরিয়াতিয়া ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দ্রা গারমাঝাপোভা বলেন, আংশিক সেনা সংযোজন নয়, এখানে শতভাগ সেনা সংযোজন হচ্ছে। তিনি বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেনাবাহিনীতে সেনা সংযোজনের ঘোষণা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মাথায় বুরিয়াতিয়াতে ৩ হাজারের বেশি মানুষের কাছে সমন পাঠানো হয়েছে। পুতিনের ঘোষণায় আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে যে রুশ নাগরিকেরা সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছেন এবং যাদের যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা আছে, তাদের এ যুদ্ধের জন্য তলব করা হচ্ছে। তবে অধিকারকর্মী বলছেন, যে মানুষদের বয়স ৫০-এর কোঠায়, তাদেরও তলব করা হচ্ছে।