খুলনা থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব ৩৫৭ কিলোমিটার। দীর্ঘ এই পথ ছুটেছেন মাকে শনাক্ত করতে। পানি আনতে বের হওয়া মা রহিমা বেগমের (৫২) খোঁজে মেয়ে ছুটেছেন দুয়ারে দুয়ারে। জীবিত পাননি মাকে। অবশেষে মরিয়ম মান্নান ময়মনসিংহের ফুলপুরে উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দি লাশের বিভিন্ন আলামত ও কাপড় দেখে বললেন, ‘এটাই আমার মা।’ তবে পুলিশ বলছে, ডিএনএ পরীক্ষার পরই চূড়ান্ত সমাধান হবে বিষয়টির।
গত ১০ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বওলা ইউনিয়নের বওলা পূর্বপাড়া গ্রামের একটি কবরস্থানে মেলে বস্তাবন্দি মরদেহ। পাশের একটি মসজিদের নির্মাণকাজ করা শ্রমিকেরা দুর্গন্ধের উৎসের খুঁজতে গিয়ে পায় লাশ। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে অজ্ঞাত হিসেবে ১১ সেপ্টেম্বর মরদেহ ময়মনসিংহের আঞ্জুমানে হেমায়েত গোরস্থানে দাফন করা হয়। নারীর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের পর ফুলপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সবুজ মিয়া বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তাতে নারীর বয়স উল্লেখ করা হয় ২৮ বছর।
ফুলপুরে উদ্ধার হওয়া নারীর লাশটি খুলনা নগরীর দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে নিখোঁজ রহিমা বেগমের (৫২) বলে দাবি করা হচ্ছে। রহিমা ওই এলাকার প্রয়াত মান্নান হাওলাদারের স্ত্রী। নিহতের ছোট মেয়ে তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী মরিয়ম বেগম ওরফে মরিয়ম মান্নান দাবি করছেন ফুলপুরে উদ্ধার হওয়া নারীই তার মা।
আজ শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে ফুলপুর থানায় যান মরিয়ম মান্নান, তার বোন মনি, মাহফুজা আক্তার, আদরী আক্তার, ভাবী, চাচাতো ভাই রুম্মান হোসেন ও মরিয়মের এক ভাতিজা। পুলিশের কাছে সংরক্ষিত বিভিন্ন আলামত দেখানো হয় তাদের। ওই সময় পায়জামা দেখে ও মাথার চুল দেখে ‘এটাই মা রহিমা’ বলে শনাক্ত করেন মেয়ে মরিয়ম। পরিবারের অন্যরাও একই দাবি করেন।
এ সময় তাদের আহাজারিতে সেখানে বেদনাঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রহিমাকে প্রতিপক্ষরা হত্যার পর ফুলপুরে এনে ফেলে গেছে বলে ধারনা স্বজনদের। মরিয়ম মান্নান বলেন, ‘মাকে চিনতে আসলে কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় না। আমি নিশ্চিত এটাই আমার মায়ের লাশ। পায়জামাটা আমার মায়ের। আমার মায়ের উপর যারা হামলা করেছিল, তারাই এটি (হত্যা) করেছে।’
নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে মরিয়ম লেখেন, ‘লাশটা পঁচা-গলা অবস্থায় পেয়েছেন তারা (পুলিশ)। অফিসিয়াল প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করছি। আমার মায়ের কপাল, আমার মায়ের হাত, আমার মায়ের শরীর- আমি কিভাবে ভুল করি! আমি সন্দেহ করি, এটা আমার মা। অফিসিয়াল কাজের পরে আমি নিশ্চিত করব।’
গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাসা থেকে নিচে নামেন খুলনার রহিমা বেগম। এরপর তিনি আর বাসায় ফেরেননি। নিখোঁজের ঘটনায় ছেলে মো. সাদী দৌলতপুর থানায় জিডি করেন। ২৮ আগস্ট থানায় একটি মামলা করা হয় প্রতিপক্ষ লোকজনকে আসামি করে। নিখোঁজ মায়ের সন্ধানে বিভিন্ন কর্মসূচি করলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
রহিমা বেগমের স্বামী মান্নান হাওলাদার মারা যাবার পর আবার বিয়ে করেন। খুলনার বাড়িতে একাই থাকতেন রহিমা। ঘটনার দিন মরিয়মের মায়ের স্বামী বাড়িতে ছিলেন। মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এ কথা তিনিই মেয়েদের ফোন করে জানান।
পরিবার থেকে জানানো হয়, খুলনার বাড়িটি নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে অনেক দিন ধরে ঝামেলা চলছে। মরিয়ম বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন। মামলার পর আসামিরা হামলা করলে রহিমা আরেকটি মামলা করেন। এসব কারণে উত্তেজনা চলছিল। রহিমার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে এসবের যোগসূত্র থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা পুলিশের।
ফুলপুরে লাশ উদ্ধারের পর যে মামলা হয়েছিল, সেটি তদন্ত করছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবদুল মোতালিব চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মেয়েরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করছে এটিই তাদের মা। তবে ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই সেই ব্যবস্থা করা হবে।’