নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, আমরা পারলে ৩০০ আসনেই ইভিএম ব্যবহার করতাম। ওই তো বললাম টাকা (ইভিএম কেনার জন্য) নেই। আবার ট্রেনিংও (ইভিএম ব্যবহারে) সম্পন্ন করতে পারবো না। আমরা আরও দুবছর আগে দায়িত্বে এলে ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট দিতাম।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ইভিএমে ওভাররাইট করার সুযোগ নেই। এখানে ওভাররাইটের বিষয়ও নেই। কারও আঙুলের ছাপ না মিললে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেন। তার আগে সংশ্লিষ্ট ভোটারের পরিচিতি এনআইডি নম্বর দিয়ে শনাক্ত করা হয়। অথচ টক শোতে অনেকে বলছেন ওভাররাইট করা যায়।
তিনি বলেন, অনেকে বলছেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এটাকে (ওভাররাইট) ৫০ শতাংশ পর্যন্ত করতে পারেন। কিন্তু আপনারা এসে দেখেন, যে ইভিএম চাইবেন আপনাদের সেটাই পরীক্ষা করতে দেবো, দেশে-বিদেশের এক্সপার্ট নিয়ে আসেন, দেখেন।
ইসি আলমগীর বলেন, আবার বলা হয়, মামলা হলে কীসের ভিত্তিতে হবে। ভিপি ট্রেইল তো নেই। আমাদের ইভিএমের চেয়ে ভালো ব্যবস্থা আছে। নির্বাচনের পর এক বছর পর্যন্ত সিলগালা অবস্থায় থাকবে। এখান থেকে কোন মার্কায় কখন কত ভোট পড়েছে সব প্রিন্ট করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, ইভিএম নিয়ে বিশ্বাস কিন্তু ভোটাররা করে। কোথাও দেখেছেন এটা নিয়ে প্রতিবাদ করতে, মিছিল করতে? যারা লিখছেন তারা তো ইভিএম দেখেনইনি, শুনেনওনি। তারপরও লিখে ফেলছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট সুষ্ঠু নির্বাচন করা। ইভিএমে ছিনতাই, জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই ওখানে যাবে না। যাবে ওইখানে, যেখানে ব্যালট পেপারে ভোট হবে। আমরা সেজন্যই ব্যালটেও যাবো, সেখানে ফোর্স বেশি মোতায়েন করবো। ইভিএমের আসনগুলোতে এতো ফোর্স লাগবে না, সেগুলো আমরা ব্যালটের আসনগুলো ভাগ করে দেবো।
অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তো কথা বলতে পারি না। একটি বড় দল, তার সঙ্গে আরও চারটি দল সরাসরি ইভিএম চেয়েছে। শর্ত সাপেক্ষে আরও সব মিলিয়ে ১৭টি দল চাচ্ছে। তবু বলা হচ্ছে, ইভিএম নিয়ে মতামত পাল্টে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা লিখলেন তারা কি প্রমাণ করতে পেরেছেন?
‘ইভিএমে প্রাথমিক ব্যয় বেশি। একটা ব্যালট কিন্তু ছাপাতে হয়, ক্যারি করতে হয়, প্রচুর খরচ আছে। ইভিএমে একবার খরচ হয়। এরপর এটা কিন্তু আমরা অন্য নির্বাচনেও ব্যবহার করি। মামলা করার জন্য যে সময় থাকে, ওই সময় পর্যন্ত আমরা ওই ইভিএমটা রেখে দিই। সময় শেষ হলেই কেবল আরেকটা নির্বাচনে ওই ইভিএম ব্যবহার করি। ইভিএমে লাইফ টাইম ২০ বছর পর্যন্ত আছে। এটা তো কেবল জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় নির্বাচনেও ব্যবহার করছি। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। এই কমিশন আসার পর একটা নির্বাচনও ব্যালটে করিনি’- যোগ করেন এই নির্বাচন কমিশনার।
ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থাহীনতার বিষয়ে তিনি বলেন, ১২ কোটি ভোটারের পরিপূর্ণ আস্থা আছে। হয়তো দলগুলোর রাজনৈতিক কৌশল আছে। তবে তাদেরও অন্তরে বিশ্বাস আছে, মুখে নেই। কারণ অনেক দলই বিপক্ষে কথা বলছে, কিন্তু আমাদের কাছে এসে পক্ষে বলেছেন। একটি দলের একজন সংসদ সদস্য আমাদের কাছে এসে লিখিত দরখাস্ত করেছেন তার এলাকায় ইভিএম দেওয়ার জন্য। কাজেই এটা বলা যায়, উনারা অন্তরে ইভিএম বিশ্বাস করেন।
ইসি আলমগীর বলেন, ইভিএমের ভোটে সবাই নির্বাচনে আসবে। ২০২৩ বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যে নির্বাচন হবে, তাতে সব দল অংশগ্রহণ করবে বলে আমরা আশাবাদী। নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে আসবে বলে আশাকরি। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি মনে করে অন্য দলের সঙ্গে নির্বাচন করবে অথবা অন্য একটি দলকে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশ নেবে না, এমনটাও তো হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই ভোটের পরিবেশ তৈরি করবো। আমাদের ভেতরে ও বাইরে এক। আলাদা নেই কিছু। রোডম্যাপে আমরা আমাদের চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবিলার কথা উল্লেখ করেছি। কোনো কমিশন কি এর আগে তা করেছে? আমরা কনফিডেন্ট এজন্য যে, এই রোডম্যাপ আমরা বাস্তবায়ন করবো। বাস্তবায়ন করলে সবাই আসবে।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইভিএম ব্যবহারের কারণে কোনো দল নির্বাচন বয়কট করবে না বলে নির্বাচন কমিশন বিশ্বাস করে।