জলবায়ু পরিবর্তন ও এএফপিকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার

সম্পাদকীয়

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু ইস্যুতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী দেশগুলো জোরালো বক্তব্য রাখলেও পরিস্থিতির গুরুত্বের সঙ্গে তাদের কার্যক্রম সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অথচ তারাই এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। তাদেরই এই ইস্যুতে এগিয়ে আসা উচিৎ। কিন্তু আমরা তাদের দিক থেকে সে ধরনের কোনো সাড়া পাচ্ছি না। এটা দুঃখজনক। তিনি আরও বলেছেন, ধনী দেশগুলো আরও ধনী হতে চায়, এজন্য তারা অন্যদের নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর সম্ভাব্য প্রাকৃতিক ও মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অধিক কার্বণ নিঃসরণকারী রাষ্ট্রসমূহের আরও আন্তরিক হওয়া উচিত।

বাংলাদেশে কার্বন নির্গমনের হার অত্যন্ত কম, শতকরা প্রায় শূন্য দশমিক ২ ভাগ মাত্র। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে ঘন জনবসতিপূর্ণ ডেল্টা ও নিম্নাঞ্চলীয় বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। আইপিসিসির সর্বশেষ গবেষণায় দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ বর্তমান সময়ের তুলনায় বার্ষিক গড় তাপমাত্রা বাড়বে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্ষাকালে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির তুলনায় শীতকালে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার হবে বেশি। শীতের তীব্রতা অনেকটাই কমে যাবে, কিন্তু গ্রীষ্মকালে গরমের মাত্রা ক্রমেই বাড়বে। এতে বাংলাদেশে ছয়টি ঋতুর পরিবর্তে কেবল চারটি ঋতু আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যাবে।

universel cardiac hospital

বিশ্বব্যাংকের এক জরিপে দেখা গেছে, ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ১ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ বাসস্থান হারাবেন। ১ কোটি মানুষ এরই মধ্যে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছেন। সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীর পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন এবং ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিবছর ৪ লাখ মানুষ স্থায়ীভাবে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসছেন। এদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগই জলবায়ু উদ্বাস্তু। এমতাবস্থায় দেশের জনগণ প্রত্যাশা করে, জলবায়ুর পরিবর্তন রোধের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজে আরও কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে যাবেন।

শেয়ার করুন