সুপ্রাচীন কাল থেকেই বিশ্ব দেখার দুর্নিবার নেশায় মত্ত মানুষেরা বিক্ষুব্ধ মহাসিন্ধু পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছে অজানা অচিন স্থানে। মূলত এই অনুসন্ধিৎসু বিশ্ব পরিব্রাজকদের ভ্রমণাকাঙ্ক্ষা থেকেই পর্যটন শিল্পের উৎপত্তি। সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটনের রুপ ও প্রকৃতিতেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এটি এখন শুধু কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ভ্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমগ্র মানবগোষ্ঠীর জন্য একটি বিশ্বজননীন সাধ। আর সেজন্যই পর্যটন এখন একটি শিল্প, যা বর্তমানে সারা বিশ্বে একটি অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবেও সুপরিচিত। প্রকৃতির নন্দনকাননের সৌন্দর্যমণ্ডিত সার্থক কোনো চিত্রশিল্পীর নিরেট চিত্রকর্মের সঙ্গে তুলনীয় আমার জন্মভূমি। ব-দ্বীপ সদৃশ এ দেশের রয়েছে বিচিত্র ভূ-ভাগ এবং বিস্তীর্ণ উপকূল যা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র। নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু এবং প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো অনেক সম্পদ রয়েছে এ দেশে। তাই পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে এক অপার সম্ভাবনার নাম। বহুমাত্রিক সম্ভাবনা থাকা সত্তেও অন্যান্য দেশের মতো পর্যটন বাংলাদেশে এখনো শিল্প হিসেবে পূর্ণ বিকশিত হতে পারেনি, তবে সময়োপযোগী ও পরিকল্পনামাফিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুতই এ শিল্পের বিপ্লব ঘটানোর মতো পর্যাপ্ত সুযোগ বাংলাদেশের রয়েছে।
পর্যটন শিল্প বিশ্বের একক বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে পর্যটন এখন অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার খাত। ১৯৫০ সালে পৃথিবীতে পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র ২ কোটি ৫০ লাখ; যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় প্রায় ১৪০ কোটিতে। অর্থাৎ বিগত ৬২ বছরে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫৬ গুণ। এই সংখ্যা আসন্ন বছরগুলোতে অর্থাৎ ২০২৫ সাল নাগাদ, ২০০ কোটি হবে। পর্যটকের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধিও ব্যাপকতা লাভ করেছে। ২০১৭ সালে বিশ্বের জিডিপিতে ট্যুরিজমের অবদান ছিল ১০.৪ শতাংশ, যা ২০২৭ সালে ১১.৭ শতাংশে গিয়ে পৌঁছাবে। যদিও এর আগে করোনা মহামারির সময়ে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। তবে ধীরে ধীরে এই সংখ্যা আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষণা বলছে, এই বিপুল পর্যটকের ৭৫ শতাংশ পর্যটক ভ্রমণের জন্য বেছে নেবে এশিয়া। আর সেখানেই আমাদের পর্যটন খাতকে নিজের সুযোগ তৈরি করে নিতে হবে।
বাংলাদেশ অপূর্ব সৌন্দর্যের আধার, যার নৈসর্গিক রূপবৈচিত্র্যের কোনো কমতি নেই। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, কাপ্তাই, কোয়াকাটা, ময়নামতি, মহেশখালী, পার্বত্য চট্টগ্রামের হৃদয় মাতানো সৌন্দর্য, পুণ্যভূমি খ্যাত সিলেটের সবুজ অরণ্যসহ আরও অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই দেশ।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশ্বের বুকে একমাত্র দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত, যা আর অন্য কোনো রাষ্ট্রে নেই। ১২০ কিমি. দীর্ঘ সৈকতটিতে কর্দমার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। আর সেজন্যই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমুদ্র সৈকতের চেয়ে আমাদের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বর্তমানে এই সৈকতকে কেন্দ্র করে নেয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা। সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগরের পাড়ে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সুন্দরবন বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনভূমি, যেটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল (খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা) জুড়ে বিস্তৃত। এর মোট আয়তনের ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। এটি ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কোর ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের সঙ্গে সঙ্গে এ বনের জীববৈচিত্র্য এটিকে বিশ্বের অন্য যে কোনো পর্যটন কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্ররূপে উপস্থাপন করেছে। এখানে জালের মতো জড়িয়ে রেখেছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, খাল, শত শাখা নদ-নদী এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। সুন্দরবনের নামের সঙ্গে যেই বিষয়টি নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত, তা হল বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। অরণ্যটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, চিত্রা হরিণ, সাপ, কুমির, ডলফিনসহ অসংখ্য প্রাণীর আবাসস্থল।
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল পর্যটনের এক অপার সম্ভাবনার নাম, যা পার্বত্য চট্টগ্রাম নামেই সবার কাছে পরিচিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম মূলত তিনটি জেলার সমন্বয়ে গঠিত। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের তিনটি জেলা- রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান নিয়ে গঠিত। পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটনের মূল উপকরণ হল অসংখ্য পাহাড় বেষ্টিত সবুজ প্রকৃতি, যা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে পর্যটকদের আকর্ষিত করে। এখানে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে শীত মৌসুমে যেমন এক রূপ ধরা দেয়, ঠিক তেমনি বর্ষায় হাজির হয় অন্য এক রূপ। শীতে ঘন কোয়াশা আর মেঘের চাদরে যেমন ঢাকা থাকে পাহাড়, তার সঙ্গে থাকে সোনালি রোদের মনোমুগ্ধকর স্নিগ্ধতা পর্যটকদের হৃদয়কে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। অন্যদিকে বর্ষায় চারদিক জেগে ওঠে সবুজের সমারোহ। বর্ষায় মূলত এ অঞ্চলে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিস্টদের পদচারণাই সবচেয়ে বেশি থাকে। তখন এখানে ঝরনা, হ্রদ কিংবা নদীপথগুলো নতুন রূপে সেজে ওঠে।
বাংলাদেশের পুণ্যভূমি হিসেবে খ্যাত সিলেট অঞ্চল নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আরেক লীলাভূমি। এখানে রয়েছে উপমহাদেশের সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ চা বাগান মালনীছড়া চা বাগান। এ অঞ্চলে আসা পর্যটকদের চিত্তকে প্রশান্ত করে সৌন্দর্যের রানীখ্যাত জাফলং, নীলনদ খ্যাত স্বচ্ছ জলরাশির লালাখাল, পাথর জলের মিতালিতে বয়ে যাওয়া বিছনাকান্দির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, পাহাড় ভেদ করে নেমে আসা পাংথুমাই ঝরনা, সাদাপাথর, চোখ জোড়ানো তামাবিল, রাতারগুল।
বাংলাদেশ ভ্রমণে এসে বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা আবিষ্কার করেছিলেন বাংলার মাটি, ফসল ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তাঁর লিখিত ‘রিহালা’ গ্রন্থে এদেশের প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বারংবার বাংলাদেশ ভ্রমণের প্রয়াস ব্যক্ত করেন। তবে বর্তমান সময়ে যদি বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কিংবা এই দেশ সম্পর্কে তাঁদের উপলব্ধি জানতে চাওয়া হয়, তাহলে নিতান্তই তদানিন্তন বাংলার সৌন্দর্য নিয়ে আফসোস-ই চলে আসে। যেমনটি ঘটেছিল ২০১৬ সালে পর্যটন বর্ষে। সরকার ১০ লাখ বিদেশি পর্যটক আনার ঘোষণা দিয়েও তেমন কোনো সুফল পায়নি, যা আমাদের ব্যর্থতার পাল্লাকেই ক্রমশ ভারী করে দিচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো এই শিল্পকে প্রাধান্য দিয়ে দেশীয় অর্থনীতিকে গতিশীল করে গেলেও, এখনো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অনুযায়ী পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন করতে পারিনি আমরা।
ভারতে বিদেশি পর্যটক বৃদ্ধি নিয়ে এক গবেষণায় দেখা যায়, পর্যটনের উন্নতি করতে হলে আমলাতন্ত্রের হাত থেকে এ খাতকে বের করে আনতে হবে। কেননা, পর্যটন নিয়ে আলাদা আগ্রহ ও জানাশোনা থাকতে হয়। এটা প্রথাগত আমলাদের দিয়ে পরিচালনা সম্ভব নয়। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয় এখন চলছে মূলত গবেষক এবং এ খাতের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে। আমাদের দেশেও এখন সেটা করতে হবে। কিন্তু আমাদের পর্যটন মন্ত্রণালয়, করপোরেশন, বোর্ড—সব প্রতিষ্ঠান চলছে প্রথাগত আমলাদের দিয়ে। এখানে পর্যটন খাতের বিশেষজ্ঞদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। বাংলাদেশে এত দিনেও একক পর্যটন আইন, ন্যাশনাল ট্যুরিজম ডেটাবেইস, ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট, কোয়ালিটি ট্যুরিজম সার্ভিস, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ও গবেষণা সেল তৈরি হয়নি। সারা বিশ্বে পর্যটন চলে পর্যটনের নিয়মে আর আমাদের দেশে পর্যটন চলে আমলাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায়। ফলে এ খাত অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলার বেড়াজালে আবদ্ধ। পর্যটনের উন্নয়নে কিছু করতে গেলে দেখা যায় ১৯টি মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততা আছে। এতে মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে গিয়ে সম্মুখীন হতে হয় বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধকতার।
বাংলাদেশের পর্যটন খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। এর ভেতর সরাসরি যুক্ত আছেন ১৫ লাখ আর পরোক্ষভাবে যুক্ত আছেন প্রায় ২৫ লাখ। বর্তমানে পর্যটন খাতে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়, এটিকে ১০ শতাংশে উন্নীত করার কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার এখনই সময়। সেজন্য ফরেন ট্যুরিজমের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে। কেননা ফরেন ট্যুরিস্ট না আসলে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ বাড়বে না। এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতিবছর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করে। এই সংখ্যাটি সন্তোষজনক হলেও এর মাত্র ২ শতাংশ ফরেন ট্যুরিস্ট। এটি মূলত ফরেন ট্যুরিস্টদের দৃষ্টিআর্কষণের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। কাজেই ফরেন ট্যুরিস্টদের দৃষ্টিআকর্ষণ করতে আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে; আর সেজন্য অবশ্যই এ খাতে আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে আরও ডেভেলপমেন্ট করতে হবে। এখন যে অবস্থায় আমরা আছি, সেটি পর্যটনের বিকাশে পর্যাপ্ত নয়। আমাদের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, পর্যটকদের নিরাপত্তা, সি বিচে ময়লা এসব নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে। এছাড়া শুধু ফরেন ট্যুরিস্টদের জন্য একটি এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন করা যেতে পারে।
অবশ্য বর্তমান সরকার পর্যটন শিল্পের বিকাশে বেশকিছু সম্ভাবনাময় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কক্সবাজারে নাফ ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার ঘোষণা পর্যটন বিকাশে ইতোমধ্যে নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। কেননা এতে বিনিয়োগ করছে থাইল্যান্ডের বিখ্যাত কোম্পানি সিয়ামসিয়াম ইন্টারন্যাশনাল। প্রাথমিকভাবে কোম্পানিটি ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। ২৭১ একর জায়গাজুড়ে প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি ১২ হাজারের বেশি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নাফ ট্যুরিজম পার্কের উন্নয়ন কাজ হাতে নিয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ এভিয়েশন খাত নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে। নতুন নতুন বিমানবন্দর স্থাপনের অনুমোদন, বিমান সংস্থাগুলোর সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বৃদ্ধি, বিমানবন্দর আধুনিকায়নে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সরকারের এই উদ্যোগ এদেশের পর্যটন শিল্পকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
সবশেষে, বাংলাদেশে পর্যটন খাতে যে বৈচিত্র রয়েছে, তাতে সহজেই পর্যটকদের আকর্ষণ করা সম্ভব। পর্যটন বলতে শুধু ঘোরাফেরার ধারণা বদল করে এটিকে বহুমুখী করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পর্যটনের বহু শাখা-প্রশাখার মধ্যে বিনোদন পর্যটন, সাংস্কৃতিক পর্যটন, ইভেন্ট পর্যটন, সাংস্কৃতিকভিত্তিক পর্যটন, ক্রিয়া পর্যটন, নৌ-পর্যটন, হাওর পর্যটন, ধর্মভিত্তিক পর্যটন শিল্পকে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া আমাদের দেশের চিরায়ত চারু ও কারুশিল্প, মৃত্তিকাশিল্প, তাঁতশিল্পকে কেন্দ্র করে এখনো জেলাভিত্তিক কোনো পর্যটন ব্যবস্থা দাঁড়ায়নি। এগুলো পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে। অভ্যন্তরীণ পর্যটনে সফলতা আসলে গ্রামীণ নারীরাও তাদের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। কাজেই, পর্যটন শিল্পের বিকাশে সময়োপযোগী ও পরিকল্পনামাফিক পদক্ষেপ গ্রহণের এখনই সময়। আমরা যদি কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে পর্যটন স্পটগুলোকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে অবশ্যই এদেশে পর্যটন শিল্পের বিপ্লব সূচিত হবে। তবে এই বিপ্লব সূচিত করতে হলে সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে বেসরকারি ট্যুর অপারেটর, হোটেল ও এভিয়েশন–সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে গবেষণালব্ধ পরিকল্পনা সামনে রেখে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কেই নেতৃত্ব দিতে হবে।
লেখক: সিনিয়র সাব-এডিটর, মত ও পথ